বিহারের পুনরাবৃত্তি হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের পুনরাবৃত্তিও হচ্ছে না।
বিহারের মতো উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিরোধী জোট নরেন্দ্র মোদীর বিজয়রথ আটকাতে পারেনি। উল্টে ভরাডুবি হয়েছে। কিন্তু তা-ই বলে এখনই কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টি কেউই জোট ভেঙে দিতে চাইছে না। এ বিষয়ে রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব— দু’জনেই একমত। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের পরেই কংগ্রেসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে জোট ভেঙে দিয়েছিল সিপিএম। উত্তরপ্রদেশে তা হচ্ছে না।
অখিলেশ যাদব আজ লখনউয়ে স্পষ্ট ভাবেই বলে দিয়েছেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে জোট দুই যুব নেতার জোট। এই জোট ভবিষ্যতেও থাকবে।’’ আর রাহুল টুইট করেছেন, ‘‘মানুষের হৃদয়-মন জয় না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’’ দুই দলের নেতারই যুক্তি, এই জোট হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপিকে আটকানোর প্রয়োজনে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও সেই প্রয়োজন পড়বে। তবে এখন জোটের কার্যকারিতা বলতে শুধু উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় সপা-কংগ্রেস একসঙ্গে থাকবে কি না, সেই টুকু প্রশ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ৪০৩টি আসনের মধ্যে ৩২৫টিতে জেতা বিজেপি জোট (বিজেপি ৩১২, আপনা দল ৯, সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি-৪) সরকারের মোকাবিলায় সপা-কংগ্রেসের একসঙ্গে থাকার প্রয়োজন পড়বে। আর কংগ্রেস-সপা মিলেই বিরোধীর ভূমিকা পালন করবে— তা বুঝিয়ে আজ অখিলেশও রাহুলের সুরেই দাবি তুলেছেন, বিজেপির সরকার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই কৃষকদের ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত নিক।
দলের মধ্যে এই জোট নিয়ে অখিলেশ ও রাহুল দু’জনেই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। অখিলেশের দাবি, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লাভই হয়েছে। তাঁর যুক্তি, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস বা সপা মিলে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে মোট ভোটের ২৯ শতাংশ পেয়েছিল। এ বার সেই হার খুব একটা কমেনি। বিজেপিরও ভোটের হার লোকসভার তুলনায় কমেছে। কাজেই জোট করে কোনও ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন না কংগ্রেসের নেতারাও। বিজেপি কী করে এত বিপুল সংখ্যক ভোট পেল, তা আসন ও বুথ ভিত্তিক ভোটের হার দেখলে বোঝা যাবে বলে অখিলেশ মনে করছেন।
জোটের হারের পর আজ বিজেপির নেতারা কটাক্ষ করেছেন, মানুষ দুই নেতার জোটকে গ্রহণ করেনি। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, দুই দলের কর্মী-সমর্থকরাই এই জোট মেনে নেননি। নিচুতলায় তা-ই জোট বলে কিছু ছিল না। তবে জোট পন্থীরা বলছেন, অমেঠীর মতো আসনে সপা-কংগ্রেসের জোট না হওয়ায় তার ফায়দা বিজেপি পেয়েছে। সপা ও কংগ্রেসের প্রার্থী যে ভোট পেয়েছেন, তা বিজেপির থেকে বেশি। ফলাফলের পরে বিজেপির অনেকেই বলছেন, অখিলেশের ‘কাম বোলতা হ্যায়’-এর প্রচারে কাজ হয়নি। বরং তাঁর সাইকেলের চাকা ফুটো করে দিয়েছে কংগ্রেস।
অখিলেশের মন্তব্য, “আমার সাইকেলে তো টিউব ছাড়া চাকা ছিল! আমি এক্সপ্রেসওয়ে করেছিলাম, লোকে বোধহয় বুলেট ট্রেন চেয়েছে। আসলে অনেক সময় বুঝিয়ে ভোট মেলে না, ভুল বুঝিয়ে ভোট মেলে।”