সনিয়া গাঁধীর বাঁ পাশে নীতীশ কুমার। আর ডান পাশে মাথায় হিমাচলী টুপি পড়ে তৃণমূলের ডেরেক ও-ব্রায়েন।
কংগ্রেস সভানেত্রীর ইফতারের আয়োজনে হাসিমুখে এই ছবিটি এখনও বছরখানেকের বেশি পুরনো হয়নি। কিন্তু প্রায় এক বছরের মধ্যেই রাজনীতির অঙ্ক অনেকটাই ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। সেই ডেরেক ও-ব্রায়েনই আজ বলছেন, কংগ্রেস আমাদের কাছে এখন একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আর তৃণমূল সূত্র বলছে, এ বারে যদি সনিয়া গাঁধী ইফতারে আমন্ত্রণও জানান, তা হলেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেউ হাজির থাকবেন না।
এমন একটি আশঙ্কার বার্তা পৌঁছে গিয়েছে দশ জনপথেও। তাই কংগ্রেস থেকে আজই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বারে আর ইফতারের আয়োজনই করছেন না কংগ্রেস সভানেত্রী। বরং গরিবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হবে। শুধু তৃণমূল নয়, সদ্য হয়ে যাওয়া বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের আরও দুটি রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার পর বাকি বিরোধী দলগুলিও কতটা আসতে উৎসাহী হবে, তা নিয়েও সন্দিহান দশ জনপথ। এই সাত-পাঁচ ভেবেই এ বারে আর ইফতারের পথে হাঁটতে চাইছেন না সনিয়া।
আরও পড়ুন: স্বামীকে আপাতত লাগাম পরাল সঙ্ঘ ও বিজেপি
গত বার তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক মধুর ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ উপেক্ষা করেও রাহুল গাঁধী বামেদের সঙ্গে জোটে গিয়েছেন, তার পর থেকে তিক্ততা শুরু হয় দুই দলের। এই তিক্ততা আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়, যখন খোদ সনিয়া ও রাহুল গাঁধী বাংলায় প্রচারে গিয়ে সরাসরি তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে সরব হন। তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা আজ বলেন, ‘‘বাংলায় তো বটেই, জাতীয় প্রেক্ষাপটেও এখন কংগ্রেস ধীরে ধীরে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে। হাতে গোনা যে ক’টি রাজ্যে তারা রয়েছে, তার মধ্যে দক্ষিণে কর্নাটক ছাড়া আর সব ক’টি পাহাড়ের রাজ্য। সেই রাজ্যগুলিও ছোট। আর কর্নাটকেও কংগ্রেসের হাল মোটেও ভাল নয়।’’
কংগ্রেস সূত্রের মতে, দলের কাছে আশঙ্কার আর একটি কারণ হল সম্প্রতি মোদী সরকার পণ্য ও পরিষেবা কর সংক্রান্ত বিল নিয়ে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার কৌশল নিচ্ছে। বাকি বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়েছে। তার উপর সামনে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে মুলায়ম সিংহ যাবদ কিংবা মায়াবতীও সনিয়া গাঁধীর ডাকা ইফতারে সামিল হতে চাইবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। গত বারও মুলায়ম সিংহ যাদব আসেননি। রামগোপাল যাদব আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত যোগ দেননি। তবে মায়াবতী নিজে না এলেও সতীশ মিশ্রকে পাঠিয়েছিলেন। গত বার বামেদের পক্ষ থেকে মহম্মদ সেলিমকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে মত বদল করা হয়। তা-ও নীতীশ কুমার, শরদ পওয়ার, ওমর আবদুল্লাদের নিয়ে বিরোধী জোটকে মজবুত করার একটি ছবি গত বার যেটি দেখানো সম্ভব হয়েছিল, এ বারে তার সম্ভাবনা ক্ষীণ।