নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উভয়সঙ্কটে বিজেপি

প্রদেশ বিজেপির এক মুখপাত্র জানান, সরকারি ভাবে বিলটি আলোচনার তালিকায় থাকার কথা এখনও জানানো হয়নি। তবে বিজেপি সাংসদদের সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অধিবেশনে বিলটি আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই রাজ্যে খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ নিয়ে কম বিতর্ক হচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share:

কুমার দীপক দাস। ছবি: সংগৃহীত।

নাগরিকপঞ্জির খসড়া প্রকাশ নিয়ে এমনিতেই চাপে রয়েছে অসমের বিজেপি সরকার। তার মধ্যেই খবর এসেছে, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিল আনা হতে পারে। এতে আরও চাপে পড়ে গিয়েছে প্রদেশ বিজেপি।

Advertisement

নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন এনে হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিক অধিকার দেওয়া হবে, এ কথা ঘোষণা করা হয়েছিল কংগ্রেস আমলেই। পরে বিজেপিও একই আশ্বাস দিয়েছে। এত দিন গড়িমসির পরে সেই বিল সংসদে আনা হচ্ছে। কিন্তু অসম গণপরিষদ (অগপ)-এর সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ওই আইন সংশোধন নিয়ে চাপে রয়েছে বিজেপি। কারণ, অগপ স্পষ্ট জানিয়েছে নাগরিকত্ব আইনে বদল বা হিন্দু বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়া তারা মানবে না। তেমন হলে ছিন্ন হতে পারে জোট। একই কথা জানিয়েছে আসুও। সম্প্রতি সাধারণ সভা ডেকে অগপ ঘোষণাই করে দিয়েছে, অসম চুক্তিকে অগ্রাহ্য করে আইন সংশোধন কোনও ভাবেই মানবে না।

প্রদেশ বিজেপির এক মুখপাত্র জানান, সরকারি ভাবে বিলটি আলোচনার তালিকায় থাকার কথা এখনও জানানো হয়নি। তবে বিজেপি সাংসদদের সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অধিবেশনে বিলটি আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই রাজ্যে খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ নিয়ে কম বিতর্ক হচ্ছে না।
তার মধ্যে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী বিল পাশ করা হলে রাজনৈতিক ভাবে এ রাজ্যে বিজেপি সঙ্কটে পড়বে। আঘাত আসবে সরকারেও। এই পরিস্থিতিতে বিলটি পাশ করা মোটেই ঠিক হবে না বলে মনে করছেন প্রদেশ বিজেপির ওই মুখপাত্র।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন বিধায়ক ও সাংসদ অবশ্য খোলাখুলিই হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে মুখ খুলেছেন। তেজপুরের সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মাদের মতে, হিন্দুদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে বিতর্ক থাকা অর্থহীন। শর্মা বলেন, “হিন্দু বাঙালিদের তো অন্যান্য রাজ্যে পাঠানো যায় না। আসু নিশ্চয়ই ধীরে ধীরে এই বিষয়টি মেনে নেবে। হিন্দু বাঙালিরা অসমের ভাষা, সংস্কৃতি আত্মীকরণ করে নিয়েছেন। এখন তো বরাকের বাঙালিরাও ভাল অসমিয়া বলছেন। মনে হয় না ৩ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের রাজ্যে কয়েক লক্ষ হিন্দু বাঙালিকে নাগরিকত্ব দিতে তেমন কোনও সমস্যা হবে।” অবশ্য শর্মার বক্তব্য উড়িয়ে আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য জানান, ১৯৭১ সালের পরে আসা শরণার্থীদের মানবে না আসু।

বিজেপির আশঙ্কা, এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে কংগ্রেস। প্রাক্তন মন্ত্রী অর্ধেন্দু দে ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছেন, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা সকলকে নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত। বিজেপির এক মন্ত্রীর কথায়, অসমিয়া ও বাঙালিদের ভোট টেনেই বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করলে হয় তা বাঙালিদের দূরে ঠেলবে, না হলে অসমিয়া ও অগপ-কে। কিন্তু হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব দেওয়া বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। তা মানতেই হবে। অসম আন্দোলনের অন্যতম নেতা অগপ বিধায়ক তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত স্পষ্টই জানিয়েছেন, ওই বিল পাশ হলে অগপকে এনডিএ এবং রাজ্যের শাসক জোট ছাড়াতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন