গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
৯৭ দিনের মাথায় সাফল্য! পহেলগাঁওয়ে ২৬ নিরপরাধ মানুষের খুনে জড়িত তিন জঙ্গিকে ‘শেষ’ করে দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন মহাদেব’-এ। মঙ্গলবার সংসদে এমনই তথ্য দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, ওই তিন জঙ্গিই গত ২২ এপ্রিল উপত্যকায় হামলা চালিয়েছিল। তাদের নামও জানিয়েছেন শাহ— সুলেমান শাহ, আফগান এবং জিবরান। সুলেমান ছিল জঙ্গি সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার সদস্য। শাহের কথায়, ‘‘আফগান ও জিবরানও ‘এ লিস্টেড’ জঙ্গি।’’
বিভিন্ন সূত্রে খবর, নিহত সুলেমানের আরও একটি নাম ছিল। হাসিম মুসা। লশকর-এ-ত্যায়বার অন্যতম ওই সদস্য পাকিস্তানি সেনার স্পেশ্যাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) কমান্ডো ছিল। পরে রাষ্ট্রপুঞ্জ ঘোষিত জঙ্গি হাফিজ সইদের হাত ধরে নাম লেখিয়েছিল জঙ্গি সংগঠনে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পরেই হামলার নেপথ্যে সুলেমানের বড় ভূমিকার কথা জানতে পারে ভারতীয় সেনা। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ঘোষণা করে, সুলেমান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। অবশেষে সোমবার শুরু হয় ‘অপারেশন মহাদেব।’
সোমবার সকাল থেকে শ্রীনগরের অদূরে মহাদেব পর্বতের পাদদেশে দাচিগাম জঙ্গলে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছিল সেনা এবং পুলিশ। সেই কারণে অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন মহাদেব’। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে কয়েক দিন ধরেই দাচিগামের জঙ্গলে নজরদারি চালাচ্ছিল সেনা। অবশেষে দুই সঙ্গীর সঙ্গে নিহত হয় সুলেমানও।
জানা যাচ্ছে, প্রাক্তন পাক কমান্ডো সুলেমান ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। সেই থেকে শুরু জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কার্যকলাপ। মূলত দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে ‘অপারেশন’ চালাত ওই যুবক। ২০২৪ সালের অক্টোবরে জঙ্গিহানায় সাত নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ওই কাণ্ডেও মূলচক্রী সুলেমান। সেনা সূত্রে খবর, বারামুল্লায় সেনার উপর আক্রমণ থেকে অন্তত সাতটি জঙ্গি কার্যকলাপে সরাসরি যুক্ত ছিল ওই প্রাক্তন পাক কমান্ডো। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর উপত্যকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুসা ওরফে সুলেমানের খোঁজ চালিয়েছিল সেনা ও পুলিশ। ‘স্কেচ’ করানো হয়েছিল। কিন্তু আফগান এবং জিবরান সম্পর্কে এখনও বিশদে তথ্য মেলেনি।
পহেলগাঁও হামলার পরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ তিন সন্দেহভাজনের ‘স্কেচ’ বার করেছিল। এক জন ছিল অনন্তনাগের বাসিন্দা আদিল হুসেন ঠোকর। বাকি দু’জন, আলি ভাই ওরফে তলহা ভাই এবং সুলেমান মুসা। শেষের দু’জন পাকিস্তানের বাসিন্দা বলে জানায় পুলিশ। কিন্তু গত জুন মাসে এনআইএ বলে দেয় ওই তিন জনই পাকিস্তানি। সে সময় আফগান ও জিবরনের নাম আগে শোনা যায়নি।
শাহ সংসদে জানিয়েছেন, সোমবার নিহত তিন জনেই পহেলগাঁও জঙ্গিহানার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিন জঙ্গি যে বৈসরন উপত্যকায় হত্যালীলা চালিয়েছিল, তার সমস্ত প্রমাণ রয়েছে। যে তিন জন এই তিন জঙ্গিকে খাবার সরবরাহ করত, তাদের আগে পাকড়াও করা হয়। সোমবার শ্রীনগরে তিন জঙ্গির দেহ নিয়ে যাওয়ার পরে ওই বন্দিদের দিয়ে শনাক্তকরণ করানো হয়েছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) কাছে এ নিয়ে বিশদ তথ্য রয়েছে বলে লোকসভায় জানিয়েছেন শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জঙ্গিদের মাথাদের নিকেশ করে দিয়েছেন। এখন ‘অপারেশন মহাদেব’-এর মাধ্যমে আমাদের সেনা ও সিআরপিএফ জঙ্গিদেরও শেষ করে দিয়েছে।’’