ডাইনি অপবাদে খুনের দায়ে তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল শিলচর আদালত। সঙ্গে ৬ হাজার টাকা করে জরিমানা।
ঘটনাটি ২০১৩ সালের ৬ জুনের। লক্ষ্মীপুর মহকুমার নারায়ণপুর বস্তিতে। অভিযোগ, সুকুমার মুড়া, রাজেশ মুড়া ও ছবিলাল মুড়া-সহ কয়েক জন গ্রামবাসী পড়শি জওহরলাল মুড়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। গামছা দিয়ে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চাষের জমিতে ফেলে পিটিয়ে মারে। পরে মৃতদেহ জঙ্গলে পুঁতে রাখে। নিহত জওহরলালের ভাই চিনিলাল মুড়া ১১ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশে এজাহার দেন। পুলিশ তদন্তে নেমে ১৭ জনকে গ্রেফতার করে। তদন্তকারীরা আদালতে সকলের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দাখিল করেছিলেন। ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে অতিরিক্ত দায়রা বিচারক টি কে ভট্টাচার্য আজ ১৪ জনকে অভিযোগ-মুক্ত করেন। সুকুমার, রাজেশ ও ছবিলালকে দোষী সাব্যস্ত করেন। অসমের চা বাগানগুলিতে ডাইনি অপবাদে খুনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ব্রহ্মপুত্রের তুলনায় বরাক উপত্যকায় এই প্রবণতা অনেক কম। তাই জওহরলালকে ডাইনি অপবাদে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ দিন রায় শোনার জন্যও আদালত চত্বরে ভিড় জমে।
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় গ্রামরক্ষী বাহিনীর সভাপতি রামেন্দ্র ঘাটোয়ার আদালতকে জানান, পুলিশ যখন মৃতদেহ উদ্ধারে যায়, তখনও সুকুমার গ্রামবাসীদের তাতিয়ে দেয়। অনেকে জোট বেঁধে বলতে থাকে— ‘মা কালীই ডাইনিকে মেরে ফেলেছে।’ সুকুমার নিজে ত্রিশূল নিয়ে এমন ভাব দেখাচ্ছিল যেন, এগোলে ত্রিশূলবিদ্ধ করবে। ফলে পুলিশকে পর দিন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করতে হয়। জওহরলালের ভাই রামনাথ মুড়া জানিয়েছিলেন, সুকুমার এলাকায় পুজোপাঠ করত। তার দেহে ঠাকুর প্রবেশ করেছে বলেও অনেকে বিশ্বাস করত। এক দিন পুজো চলাকালে লক্ষ্মীকে সে-ই চুলের মুঠি ধরে বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে— ‘ডাইনিবিদ্যা কার কাছ থেকে শিখেছে।’ মেয়ে কিছুই বলতে পারেনি। কয়েক দিন পরই ঘটে জওহরলাল হত্যাকাণ্ড।