তিন তালাক ও শবরীমালা ভিন্ন বিষয়, দাবি মোদীর

তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথা ভাঙার পদক্ষেপ। আবার শবরীমালা মন্দিরে সেই প্রথাকেই টিঁকিয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। এই স্ববিরোধিতা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৭
Share:

মানবী-প্রাচীর: সুপ্রিম কোর্ট সায় দিলেও শবরীমালায় এখনও ওঁরা ব্রাত্যই। তারই প্রতিবাদ কোচিতে। এএফপি

তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথা ভাঙার পদক্ষেপ। আবার শবরীমালা মন্দিরে সেই প্রথাকেই টিঁকিয়ে রাখতে চাইছে বিজেপি। এই স্ববিরোধিতা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর অবশ্য দাবি, দু’টো বিষয় আলাদা। তাই তিন তালাক বন্ধের পক্ষে যুক্তি সাজিয়েও শবরীমালা নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরলেন তিনি।

Advertisement

মঙ্গলবার টিভি সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই তিন তালাক নিয়ে অর্ডিন্যান্স আনা হয়। বিজেপির ইস্তাহারেও বলা হয়েছিল, সংবিধানের মধ্যেই বিষয়টির সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে। গোটা বিশ্বে এমনকি অধিকাংশ মুসলিম দেশে তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ। এটা কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয় নয়। তিন তালাক পাকিস্তানেও নিষিদ্ধ। তালাকের ব্যাপারটায় জড়িয়ে রয়েছে নারী-পুরুষ সমানাধিকার আর সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্ন।’’ মোদীর মতে, তাৎক্ষণিক তিন তালাকে মানুষের বিশ্বাসজড়িয়ে নেই। সে কারণেই শবরীমালার সঙ্গে এর পার্থক্য রয়েছে।

শবরীমালায় সব বয়সি মহিলাদের প্রবেশাধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই রায় কার্যকর করা নিয়ে এখনও পর্যন্ত টানাপড়েন অব্যাহত। কেরলের বিরোধী দল বিজেপি ওই রায়ের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে। এ দিন এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মোদী বলেন, ‘‘ভারতে সকলেই প্রাপ্য অধিকার পেতে পারেন। তবে এমন কিছু মন্দির রয়েছে, যেখানে পুরুষেরাও ঢুকতে পারেন না। আর সেখানে যায়ও না তারা।’’ প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘শবরীমালার রায় দিতে গিয়ে শীর্ষ আদালতের এক জন মহিলা বিচারপতি তাঁর কিছু বক্তব্য জানিয়েছেন। সেটাও ঠিক ভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।’’ মোদীর মতে, শবরীমালা বিতর্ক কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। এক জন মহিলা হয়েও বিচারপতি এ নিয়ে কিছু বক্তব্য সামনে এনেছেন। ফলে গোটা বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: মন্দির-তর্ক রেখেই লোকসভা ভোটে যেতে চান মোদী

শবরীমালা নিয়ে শীর্ষ আদালতের রায়ের পরেও প্রধানমন্ত্রী যখন অন্য ব্যাখ্যা হাজির করছেন, তখনই লিঙ্গবৈষম্য আটকাতে মঙ্গলবার কেরলে ৬২০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাচীর গড়েছেন মহিলারা। আজ বিকেলে রাজ্যের পূর্ব থেকে পশ্চিমে ১৪টি জেলার উপর দিয়ে চলা জাতীয় সড়কের উপরে এই মানব বন্ধন গড়ে তোলেন মহিলারা। প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন রাজনীতিক, লেখক, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মী-সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মহিলারা। কর্মসূচি শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সমাজ সংস্কারক আয়ানকলি-র মূর্তিতে মালা পরান। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট মহিলা প্রাচীরের একটি প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। শবরীমালায় সব বয়সি মহিলাদের প্রবেশের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিলেও বেশ কিছু দক্ষিণপন্থী সংগঠন ও বিজেপির মতো দলগুলি বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছে। মহিলারা আজও ওই মন্দিরে যেতে পারছেন না। এর জবাব দিতেই বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে এই কর্মসূচি।

আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্র কোথায় রাজ্যে’, মোদীর খোঁচা ওড়াল তৃণমূল

শবরীমালা থেকে মহিলাদের দূরে রাখার প্রথাকে রক্ষা করতে হাজারো ভক্ত ইতিমধ্যেই ‘আয়াপ্পা জ্যোতি’ জ্বালিয়ে রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়িয়েছে। এমনকি, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে কেরল সরকারের উদ্যোগকে সমর্থন করেনি প্রদেশ কংগ্রেসও। মহিলাদের প্রাচীর গড়ে আজ বিরোধীদের জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন কয়েক লক্ষ মহিলা। ছুটি হয়ে গিয়েছিল স্কুল। পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। মন্ত্রীরা তো হাজির ছিলেনই, সরকারি কর্মীরাও যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করেছিল রাজ্য সরকার। কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য খরচ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। বিজয়ন অবশ্য দাবি করেছেন, এই উদ্যোগ কার্যকর করতে সরকারি টাকা খরচ হয়নি। তিনি জানান, বাম গণতান্ত্রিক

জোট ছাড়াও মোট ১৭৬টি সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন মহিলাদের প্রাচীর গড়ে তুলেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন