TMC Brigade

শনিবারের ব্রিগেড, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কে, কী বললেন?

বহুজন সমাজ পার্টির তরফে মায়াবতী নিজে না এলেও পাঠিয়েছিলেন তাঁর দলের প্রতিনিধি সতীশ মিশ্রকে। এ দিন তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাবাসাহেব অম্বেডকরের বানানো সংবিধান ধ্বংস করে দিচ্ছে বিজেপি এবং এনডিএ। এই সরকারকে যে কোনও মূল্যে সরাতে হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৪৬
Share:

ব্রিগেডে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

কেউ বক্তৃতা করলেন হিন্দিতে, কেউ তামিল, কেউ বা ইংরেজিতে। বাংলায় ভাষণ দিয়ে আবার সবাইকে চমকে দিলেন ‘বিহারী বাবু’ শত্রুঘ্ন সিন্‌হা। শনিবারের ব্রিগেডে এ ভাবেই উঠে এল ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ সমাবেশের সর্বভারতীয় চরিত্র। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে সকাল থেকেই দেশের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্র যেন কিছু সময়ের জন্য সরে এসেছিল কলকাতার ব্রিগেডে।

Advertisement

বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে নোটবন্দি, জিএসটি, ঘৃণামিশ্রিত অপরাধ, সাম্প্রদায়িক হিংসা, সিবিআই-সহ বিভিন্ন ইস্যু। যদিও একটি বিষয় ছুঁয়ে যায় সকলেই। তা হল আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করার কথা।

ব্রিগেডের সভায় ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, এমনকি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীও। কতটা তারকাখচিত ছিল ব্রিগেড সমাবেশ, তা বুঝতে চোখ বোলানো যাক উপস্থিতির তালিকায়। শনিবারের ব্রিগেড মঞ্চে ছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা এবং তাঁর ছেলে ওমর আবদুল্লা, তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন, প্রাক্তন বিজেপি নেতা অরুণ শৌরি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা হেমন্ত সোরেন, এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার, কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এবং মল্লিকার্জুন খড়গে, বহুজন সমাজ পার্টির প্রতিনিধি সতীশ মিশ্র, সমাজবাদী পার্টি নেতা এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এবং দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতা এবং লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব। ছিলেন এখনও বিজেপিতে থাকা বিজেপি নেতা শত্রুঘ্ন সিন্হাও।

Advertisement

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, আজকের ব্রিগেডে কে, কী বললেন?

ছবি সৌজন্য: তৃণমূলের টুইটার অ্যাকাউন্ট

কংগ্রেসের নেতৃত্বে সারা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট তৈরিতে বেশ কিছু দিন ধরেই তৎপর অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং তেলুগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে ব্রিগেডে এসে তিনি প্রথমেই বলেন, উন্নয়নের নিরিখে কেন্দ্রের থেকে অনেক ভাল কাজ করেছে পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ। এর পরই তিনি তোপ দাগেন বিজেপির বিরুদ্ধে। ইভিএম, অর্থাৎ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ তোলার পাশাপাশি দেশ জুড়ে ঘৃণামিশ্রিত অপরাধে মদত দেওয়ার অভিযোগও আনেন। একই সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, ২০১৯-এ নতুন প্রধানমন্ত্রী দেখবে ভারত।

ছবি সৌজন্য: তৃণমূলের টুইটার অ্যাকাউন্ট

ইভিএম নিয়ে অভিযোগ তোলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাও। পাশাপাশি বিরোধীদের এক জোট হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা পরেও ঠিক করা যেতে পারে। কারণ দেশ জুড়ে ধর্মের নামে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।’’

ছবি সৌজন্য: তৃণমূলের টুইটার অ্যাকাউন্ট

ভারতের বাতাষে বিষ ছড়াচ্ছে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি। আমাদের জোট মানুষের সঙ্গে, সেখানে মোদী-অমিত শাহের জোট এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআইয়ের সঙ্গে। ব্রিগেডের সভায় এই মন্তব্য করলেন সমাজবাদী পার্টি নেতা এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। বিজেপিকে হঠাতে জোটবদ্ধ ভাবে লড়াইয়ের কথাও জানান তিনি।

জোটবদ্ধ ভাবে লড়াই করার কথা জানান জনতা দল (সেকুলার) নেতা এবং দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ব্রিগেডে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ সময় খুবই কম। আর মাত্র কয়েক মাস পরেই লোকসভা নির্বাচন। বিজেপিকে হঠাতে এর মধ্যেই একজোট হতে হবে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে আসনরফাও জরুরি।’’

নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়গের মন্তব্য, ‘‘আপনি বলতেন খাবেন না, খাওয়াবেন না। আপনি খাচ্ছেন কি না জানি না, কিন্তু আদানি-অম্বানিকে তো খাইয়ে দিচ্ছেন। কোথায় গেল ২ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি?’’

ছবি সৌজন্য: তৃণমূলের টুইটার অ্যাকাউন্ট

তামিলে বক্তৃতা করেন তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন। অনুবাদ করে দেওয়া হচ্ছিল বাংলায়। শুরুতেই তিনি বলেন, আগামী মে মাসের লোকসভা নির্বাচন আসলে ভারতবর্ষের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘কালো টাকা নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কালো টাকা উদ্ধার করে দেশের সব নাগরিককে ১৫ লক্ষ করে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কোথায় গেল সেই ১৫ লক্ষ টাকা। মমতাদিকে ভয় পান নরেন্দ্র মোদী। অমিত শাহ-ও বাংলায় পা দিতে ভয় পায়, কারণ উনি জানেন এখানে মমতাদি আছেন। ’’

ছবি সৌজন্য: তৃণমূলের টুইটার অ্যাকাউন্ট

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক আগেই ভাষণ দেন এখনও বিজেপিতে থাকা শত্রুঘ্ন সিন্‌হা। বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে উপস্থিত সবাইকেই চমকে দেন ‘বিহারী বাবু’। মোদীকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘দেশের জনতা আওয়াজ তুলেছে, ‘চৌকিদারই চোর হ্যায়’। ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ করেছে জিএসটি। রাতারাতি তুঘলকি ফরমানের মতো কাউকে কিছু না জানিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল নোটবন্দি। একই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘ মমতার ডাকে ছুটে এসেছি ব্রিগেডে।’’

ছবি সৌজন্য: তৃণমূলের টুইটার অ্যাকাউন্ট

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালও বিজেপিকে হঠাতে জোটবদ্ধ লড়াই গড়ে তোলার কথা জানান। ব্রিগেডে তাঁর মন্তব্য, ‘‘৭০ বছরে পাকিস্তান যেই ক্ষতি করতে পারেনি, গত চার বছরে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি তাই করে দেখিয়েছে।’’

বহুজন সমাজ পার্টির তরফে মায়াবতী নিজে না এলেও পাঠিয়েছিলেন তাঁর দলের প্রতিনিধি সতীশ মিশ্রকে। এ দিন তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাবাসাহেব অম্বেডকরের বানানো সংবিধান ধ্বংস করে দিচ্ছে বিজেপি এবং এনডিএ। এই সরকারকে যে কোনও মূল্যে সরাতে হবে।’’

গত কালই ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা হেমন্ত সরেনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ব্রিগেডে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইতে আঞ্চলিক দলগুলির একজোট হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।’’

(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন