অসমে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে শতাব্দী রায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
অসমে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিষয়কেই হাতিয়ার করলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই তাঁরা জানিয়ে গেলেন, অসম থেকে বাঙালি তাড়ানোর কোনও ‘ষড়যন্ত্র’ মেনে নেওয়া হবে না। তাড়িয়ে দিলে আশ্রয়ও দেবে বাংলা।
কামরূপ জেলার মালিবাড়ি, সোনতলি বাজার ও গরৈমারি বাজারে আজ হাটবারে পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের ভোটে তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন দলের দুই সাংসদ শতাব্দী রায় ও মমতাবালা ঠাকুর এবং মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। তিন সভায় ভিড়ের বহর বিজেপি, কংগ্রেস, অগপ-সহ সব দলকেই নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে! মূলত বাংলাভাষী ওই এলাকাগুলিতে রাভা ও বড়োর সংখ্যাও কম নয়। মিশ্র ধর্মের মানুষের বাস। ফি বছর বানভাসি হওয়া গ্রামের উটের পিঠের মতো রাস্তায় গাড়ি চড়ে কাহিল মন্ত্রী সাংসদেরা। গত পরশুই সভা করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তবে গ্রামবাসীদের অনেকেই বলছেন, বগরিগুড়ি, বামুনবাড়িতে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা যথেষ্ট। অন্তত গ্রামে বাচ্চাদের হাতে হাতে জোড়া ফুল পতাকা ওড়ার অচেনা ছবি দেখে আশায় বুক বাঁধছেন প্রদেশ তৃণমূলের প্রধান, ওই এলাকারই প্রাক্তন বিধায়ক গোপীনাথ দাস।
তিনটি সভাতেই মোদী বিরোধিতার চড়া সুর বেঁধে দেন হুগলির জেলা পরিষদের সদস্য রুনা খাতুন। কোরান, গীতা, বাইবেল আউড়ে হাততালি পাওয়া রুনাদেবী এনআরসি-কে বাঙালি তাড়ানোর ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করে পড়শি বাংলায় উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন। তুলে আনেন সিঙ্গুরের আন্দোলন ও মমতার অনশনের কথা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি হলেও রুনা বা সাংসদ মমতাবালা গোটা ঘটনাকে বিজেপির পরিকল্পনা বলেই দাবি করেছেন।
সিদ্দিকুল্লা বলেন, ‘‘বিজেপি মানুষকে বোকা বানিয়েছে, এ বার ওদের বোকা বানানোর পালা। এখানে ভোট দিন, তা কালীঘাটে জমা পড়বে।’’ সাংসদ শতাব্দী এলাকার সব তৃণমূল প্রার্থীকে মঞ্চে তুলে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যা শোচনীয় রাস্তা, আমাকে পেনকিলার খেতেই হবে! এত অনুন্নয়নের পরে কংগ্রেস বা বিজেপির ভোট পাওয়ার অধিকার নেই। আপনারা পাশের রাজ্যে এসে দেখে যান, কাকে বলে উন্নয়ন।’’ তাঁর আবেদন, ‘‘যাঁরা আমার এত এত ছবি তুললেন, সকলের ভোট কিন্তু চাই।’’
রাজ্যের শাসক শিবিরের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর আইনি উপদেষ্টা শান্তনু ভরালি অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘‘বাংলা থেকে নথি যাচাই হয়ে না আসার ফলেই কয়েক হাজার বাঙালির নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে। তৃণমূল নেতারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেরও ভুল ব্যাখ্যা করছেন। সংবেদনশীল বিষয়ে ভিত্তিহীন মন্তব্য করে ওঁরা আরও জটিলতা তৈরি করছেন।’’