সরব: বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কাছে আবেদন জানানোর পরে সাংবাদিক বৈঠকে কপিল সিব্বল। ছবি: পিটিআই।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা ‘ইমপিচ’ প্রস্তাবে সামিল হল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতিকে সরানোর ওই উদ্যোগে সাড়া দিল না লালুপ্রসাদের আরজেডি কিংবা স্ট্যালিনের ডিএমকে-ও। ডিএমকে প্রথমে ওই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করলেও, পরে পিছিয়ে আসে। ডিএমকে-র স্বাক্ষর করা পাতাটি ছিঁড়ে তখন নতুন পাতায় স্বাক্ষর করানো হয় সমর্থনকারী সাংসদদের। সব মিলিয়ে দীপক মিশ্রকে ইমপিচ করার প্রস্তাবে আজ সাত দলের ৭১ জন সাংসদ স্বাক্ষর করেন। পরে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কাছে যাওয়া বিরোধীদের একাংশ আজ একটি চিঠি দিয়ে জানায়, ‘সংসদ চলাকালীন সংগ্রহ করা হয়েছিল ওই ৭১ জনের স্বাক্ষর।’ স্বাক্ষরকারীদের সাত জনের মেয়াদ ফুরিয়েছে— এই যুক্তিতে যাতে আবেদন খারিজ না-হয়ে যায়, তাই নায়ডুকে তা লিখিত ভাবে জানায় বিরোধী শিবির।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় সব প্রশ্নেই তৃণমূল যেখানে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব, এ ক্ষেত্রে কেন পিছয়ে এল? দলের একটি শীর্ষ সূত্রের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী শাসক দলের আপত্তি থাকলে প্রধান বিচারপতিকে ইমপিচ করা কঠিন। কারণ রাজ্যসভায় ওই প্রস্তাব গৃহীত হবে কি না, তা ঠিক করবেন চেয়ারম্যান। বিজেপি এ ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির পাশে থাকায়, তৃণমূল মনে করছে বিষয়টি সম্ভবত গ্রহণই করবেন না রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। ফলে গোটা প্রক্রিয়াটি ভেস্তে যাবে। তৃণমূলের যুক্তি, লোকসভার আগে বিরোধী জোটের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ ভেস্তে গেলে শাসক শিবিরের মনোবল বাড়ত। তৃণমূল ও ডিএমকে-র যে ‘ইমপিচ’-এ সায় নেই, দিল্লি সফরে এসে রাহুল গাঁধীকে তা জানিয়েছিলেন মমতা। রাহুলও সে সময়ে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু বিচারক লোয়া মৃত্যু মামলার রায় আসার পরে বিষয়টি নিয়ে এখনই এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস।
তৃণমূলের পিছিয়ে আসা নিয়ে অনেকের ব্যাখ্যা অবশ্য অন্য। ‘ইমপিচ’ প্রশ্নে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলির যে জোট হল, তা থেকে দূরত্ব বজায় রাখল ফেডারাল জোট-পন্থী তৃণমূল। উদ্দেশ্য লোকসভার আগে তৃণমূল যে রাহুল তথা কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে সমস্ত রাস্তা খোলা রাখছে, বিজেপি শিবিরকে সেই বার্তা দিয়ে রাখা। তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, দুর্নীতির অভিযোগে দলের কিছু শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে মামলা চলছে। তাই প্রধান বিচারপতির ইমপিচের পক্ষে সরব হয়ে ভোটের আগে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংঘাতে যাওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়। দল মনে করে, প্রধান বিচারপতি শাসক শিবির ঘনিষ্ঠ। তাই ২ অক্টোবরে অবসর নেওয়ার পরে লোকপাল হিসাবেও তাঁকে নিয়োগ করা হতে পারে। লোকপালের মতো সাংবিধানিক সংস্থার সম্ভাব্য প্রধানের সঙ্গে প্রথম থেকেই সংঘাতে যাওয়াটা ঠিক হবে না বলে মনে করছে তৃণমূল।