প্রতিবাদে একজোট। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী এবং অন্যেরা। সোমবার সংসদ ভবনে। ছবি: পিটিআই।
ঘরেও নয়, পারেও নয়, যে দল আছে মাঝখানে! কিংবা তারা দু’কুলেই। জাতীয় রাজনীতিতে এমনই অবস্থান এখন তৃণমূলের!
বিজেপিকে স্বস্তি দিয়ে তৃণমূল আজ সর্বদল বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছে সংসদ অচল রাখার প্রশ্নে কংগ্রেসের পাশে নেই তারা। আবার একই দিনে তারা কংগ্রেসের ২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে বিরোধীদের সঙ্গে একজোট থাকার কথা ঘোষণা করেছে।
তৃণমূলও ওই ক’দিন সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এটাকে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানো বলে মনে করছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। সংসদীয় গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁরা এই অবস্থান নিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে তৃণমূলের তরফে। রাজধানীতে অন্যান্য দলের নেতারা বলছেন, এটা স্পষ্ট ভাবেই ‘মঝঝিম পন্থা’। ১৬তম লোকসভার আগের অধিবেশনগুলিতে মমতার দলকে এই মধ্যপন্থা নিয়ে চলতে দেখা যায়নি।
কংগ্রেস সংসদ অচল করে রেখেছে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও দুই বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া ও শিবরাজ সিংহ চৌহানের ইস্তফার দাবি তুলে। এই অচলাবস্থা কাটাতেই আজ সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে কংগ্রেসের ওই দাবি থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সাফ জানিয়ে দেন, সনিয়া গাঁধীর দাবিকে সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই নেই। বরং তৃণমূল চায় সংসদ চলুক। তাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধিবেশনে তোলার সুযোগ পাওয়া যাবে।
এ দিন বিকেলেই কংগ্রেসের ২৫ জন সাংসদ সাসপেন্ড হওয়ার পরে দলনেত্রীর সঙ্গে আলোচনার করে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিবৃতি দেন, ‘‘সংসদীয় গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আমরা ২৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কাল থেকে আমরা সংসদে যোগ দেব না।’’
লোকসভার গত অধিবেশনগুলির তুলনায় এই দফায় তৃণমূলের অবস্থানের এই ফারাকটা চোখে পড়ার মতো। আগের অধিবেশনগুলিতে, সারদা প্রসঙ্গে তৃণমূল যখন প্রবল চাপে— সেই সময় সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদরা কালো ছাতা-চাদর, লাল ডায়েরি-মাটির হাড়ি নিয়ে নিত্যনতুন পথে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। জোরদার স্লোগান তুলেছেন সরকারের দুর্নীতি ও জমি বিলের বিরুদ্ধে। অথচ, এ বারে বাদল অধিবেশনে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস যখন ওয়েলে নেমে ‘ললিত-গেট’ ও ‘ব্যাপম’ নিয়ে রীতিমতো জঙ্গি কেতায় বিরোধিতা করেছে, তৃণমূল সাংসদরা তখন যে যাঁর আসনে দাঁড়িয়ে সরব হয়েছেন বটে, তবে গলা চড়াননি সে ভাবে।
সর্বদল বৈঠকে তৃণমূলের তরফে হাজির ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভায় দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। বৈঠকে কংগ্রেস যখন সুষমা-বসুন্ধরার পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল, তখন সেই পথই মাড়াননি সুদীপ-ডেরেকরা। তৃণমূল যে সব বিষয় নিয়ে সরব হতে চায়, সুদীপ তার একটি তালিকাও তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে। যার মধ্যে রয়েছে ছিটমহলের পুর্নবাসনে কেন্দ্রীয় অর্থের বরাদ্দ নিয়ে তৃণমূলের ক্ষোভ, বিভিন্ন কেন্দ্র-রাজ্য প্রকল্পে ছাঁটকাট করার প্রতিবাদ, রাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সোজাসুজি রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার মতো বিষয়গুলি। সুযোগ পেলে পশ্চিমবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতিকেও দেশের সামনে তুলে ধরা যেত বলেই মনে করছে তৃণমূল।
কার্যত সংসদ চালু রাখার দায় বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের ঘাড়েও চাপিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। আবার কংগ্রেসের সাংসদদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদও তারা করেছে এক পা বাড়িয়ে। গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে স্পিকার সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। রাজ্য-রাজনীতির সমীকরণকে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি একটি ব্যক্তিগত ভাবে ‘দার্শনিক’ অবস্থান নিয়েছিলেন বলেই তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছিল। আজও তৃণমূল নেতৃত্ব সেই সুরেই বলেছেন, বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টাকে কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। এক তৃণমূল নেতা ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন, ‘‘বিজেপি যেটা করছে তাতে আখেরে সনিয়া-রাহুলের হাতই শক্তিশালী করে দেওয়া হচ্ছে। এতে সহানুভূতি কংগ্রেসের দিকেই যাচ্ছে।’’
আপাতত তাই তৃণমূলের সাংসদেরা লোকসভায় ঢুকবেন না। বেশির ভাগ তৃণমূল সাংসদই ফিরে গিয়েছেন। রাজ্যসভায় কী কৌশল নেওয়া হবে, সেটা আগামী কাল আলোচনা করে স্থির করা হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।