নয়াদিল্লিতে একটি সম্মেলনে অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।
যে কোনও ধরনের সরকারি ভর্তুকি বা ভাতা পেতে হলে আধার কার্ড আইনত বাধ্যতামূলক করার পথে একধাপ এগিয়ে গেল নরেন্দ্র মোদী সরকার। লোকসভায় আজ আধার বিল পাশ করিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবে আধারের জন্য নথিবদ্ধ তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
রাজ্যসভায় আধার বিলটি যাতে হোঁচট না খায়, তার জন্য অর্থ বিল হিসেবে বিলটিকে নিয়ে আসা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে রাজ্যসভায় এ নিয়ে আলোচনা হলেও বাধা আসবে না। বিলে সংশোধনের ক্ষমতাও থাকবে না রাজ্যসভার। বিরোধীদের দাবি ছিল, এই বিলটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠানো হোক। মানেনি সরকার।
মনমোহন জমানাতেও আধার কার্ডের ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আইন না থাকায় সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছিল সরকার। কোর্ট নির্দেশ দেয়, আধার না থাকলেও ভর্তুকি দিতে হবে। এ বার মোদী সরকার ভর্তুকি পেতে আধার বাধ্যতামূলক করল।
জেটলির দাবি, আর্থিক সংস্কারের পথে এ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জন ধন যোজনায় দেশের প্রায় সব পরিবারেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। সকলের আধার কার্ড হলে শুধু তাঁদের অ্যাকাউন্টেই সরাসরি ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়া হবে, যাঁদের ভর্তুকির জন্য চিহ্নিত করা হবে। অর্থের অপচয়, দুর্নীতি বন্ধ হবে। কমবে ভর্তুকির বহর। ঠিক যে ভাবে আধার কার্ডের মাধ্যমে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি দেওয়ার ফলে কেন্দ্রের ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। রাজ্য সরকারেরও ভর্তুকি সাশ্রয় হবে। যে চারটি রাজ্য আধার কার্ডের মাধ্যমে রেশন ব্যবস্থা চালু করেছে, তাদের ২৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
কিন্তু আধার কার্ড না থাকলে কী হবে? অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, প্রাপ্তবয়স্কদের ৯৭ শতাংশরই আধার নথিভুক্তি হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ লক্ষ মানুষ আধারে তথ্য দিচ্ছেন। তবে আধার কার্ড যে দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, তা-ও বিলে বলা রয়েছে, জানিয়েছেন জেটলি।
আধার ব্যবস্থায় তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। মনমোহন জমানাতেও আধার বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষার দিকটি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। আজ লোকসভায় বিরোধীরা অভিযোগ করেন, এই বিলে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। কারণ আধার কার্ড পাওয়ার জন্য সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য, হাত ও আঙুলের ছাপের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য, চোখের তারার ছবিও দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে সরকার এই সব তথ্য কারও উপর নজরদারির জন্য ব্যবহার করতে পারে। এমনকী কোনও বেসরকারি সংস্থা বা বিদেশি সংস্থাও নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে বা জালিয়াতির জন্য এই সব তথ্য কাজে লাগাতে পারে। জেটলির আশ্বাস, কোনও তথ্য অন্য সরকারি সংস্থাকে দিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমোদন নেওয়া হবে। কিন্তু অনুমোদন থাকলেও বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়া হবে না। তথ্য পাবে না বেসরকারি সংস্থাও। কিন্তু বিলেই রয়েছে, কেন্দ্র জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ সব তথ্য ব্যবহার করতে পারে। কংগ্রেসের রাজীব সতাব বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার সংজ্ঞা বিলে নেই। কার তথ্য সরকার চাইবে, কোন কাজে তা লাগানো হবে, কী ভাবে ঠিক হবে কে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক?— এই সব ঠিক করার ক্ষমতা সরকারের হাতেই থাকছে।’’ জেটলির যুক্তি, জাতীয় নিরাপত্তার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা কোনও আইনেই নেই। যুগ্মসচিব স্তরের অফিসারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেই সিদ্ধান্তই ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি পর্যালোচনা করবে। তবে বিজু জনতা দলের তথাগত শতপথীর যুক্তি, বিপিএল বা রেশন কার্ডের মাধ্যমেই ভর্তুকি দেওয়ার মজবুত ব্যবস্থা তৈরি করা যেত। সরকারি অর্থ ব্যয় করে আধার কার্ড তৈরির প্রয়োজন ছিল না।