National News

১২ লাখ নিয়েছি, স্বীকার করলেন জঙ্গিদের সাহায্যকারী কাশ্মীরের ডিএসপি

জঙ্গিদের বাকি পরিকল্পনার কথাও জানতেন কি না, সে বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ১২:৪৩
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

অবশেষে জঙ্গিদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেন জঙ্গিদের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহ। সোমবার এ কথা জানিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) বিজয় কুমার। গাড়িতে জম্মু রওনা হওয়ার আগে জঙ্গিরা যে দেবেন্দ্রর বাড়িতেই ছিলেন, সে কথাও দেবেন্দ্র স্বীকার করে নিয়েছেন বলে তদন্তকারী অফিসারদের একটি সূত্রে খবর। জঙ্গি যোগের অভিযোগে সোমবারই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ বার তাঁর রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাওয়া পুলিশ পদকের পাশাপাশি সমস্ত পদক কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আইজি বিজয় কুমার। পুরো বিষয়টির তদন্তভার এনআইএ-র হাতে দেওয়া হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের একটি সূত্রে খবর।

Advertisement

অন্য দিকে গোয়েন্দদের একটি সূত্রে খবর, কাশ্মীর থেকে জম্মু তার পর চণ্ডিগড় হয়ে দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। প্রজাতন্ত্র দিবসে জঙ্গি হানার ছক ছিল বলেও একটি সূত্রে খবর। যদিও কী ধরনের হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা, অথবা দেবেন্দ্র সেই পরিকল্পনার কথা জানতেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় গোয়েন্দাদের কাছে। সেই বিষয়গুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন একাধিক গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা।

হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার নাভিদ মুস্তাক ওরফে নাভিদ বাবু ও ওই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য রফি রাঠৌরকে নিয়ে শ্রীনগর থেকে একই গাড়িতে জম্মু যাচ্ছিলেন ডিএসপি দেবেন্দ্র। গাড়ি চালাচ্ছিল কাশ্মীরের বাসিন্দা আইনজীবী তথা হিজবুলের প্রকাশ্য সদস্য ইরফান শফি মির। তার পর থেকেই ডিএসপি-র জঙ্গি যোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে জম্মু কাশ্মীর পুলিশ, কেন্দ্রীয় ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), কেন্দ্রীয় গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং ‘র’, সেনা গোয়েন্দা-সহ একাধিক তদন্তকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্তারা।

Advertisement

শ্রীনগর সেনার ১৫ কর্পসের সদর দফতরের পাশে ইন্দিরা নগরে বাড়ি দেবেন্দ্র সিংহের। গাড়িতে তোলার আগে জঙ্গিদের যে তাঁর সেই বাড়িতেই রেখেছিলেন, দেবেন্দ্র তাও স্বীকার করে নিয়েছেন বলে তদন্তকারী অফিসারদের একটি সূত্রে দাবি। তবে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, তার আগে নিজেই শোপিয়ানে গিয়ে নাভিদ বাবুকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন দেবেন্দ্র। তার পর বাড়ি থেকেই চার জন দেবেন্দ্রর ব্যক্তিগত আই-১০ গাড়িতে উঠে রওনা দিয়েছিলেন জম্মুর পথে।

কিন্তু কী ভাবে ধরা পড়লেন দেবেন্দ্র? তদন্তকারী একাধিক সংস্থা সূত্রে খবর, কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গোয়েন্দাদের স্ক্যানারে ছিলেন দেবেন্দ্র। একটি সন্দেহজনক ফোন কলের সূত্রে প্রথম সূত্র পান শোপিয়ানের পুলিশ সুপার সন্দীপ চৌধুরী। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর উচ্চপদস্থ অফিসারদের বিষয়টি জানান। এর পরেই তাঁর উপর শুরু হয় নজরদারি। তার পর অপারেশনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয় জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিআইজি অতুল গয়ালের নেতৃত্বে। এই অতুল গয়াল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে বেশ কয়েক বছর এনআইএ-তে ছিলেন। অত্যন্ত সন্তর্পণে এবং খুব কম সংখ্যক ও অত্যন্ত বিশ্বস্ত অফিসারকে নিয়ে তৈরি হয় বাহিনী। গোয়েন্দারা ঠিক করেন, জওহর টানেলের ভিতরেই আটকাতে হবে দেবেন্দ্রর গাড়ি। কারণ ওই টানেল পার হয়ে জম্মু পৌঁছে গেলেই তাঁদের ধরা কার্যত আর সম্ভব হবে না। কারণ, জম্মুতে পৌঁছেই সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যেতে পারে জঙ্গিরা। কিন্তু সেটা আর হয়নি। টানেলের মধ্যেই গাড়ি থেকে ডিএসপি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রও।

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন দেবেন্দ্র। কিন্তু শুধুই কি টাকার বিনিময়ে জঙ্গিদের সাহায্য করাই দেবেন্দ্রর উদ্দেশ্য ছিল, না কি জঙ্গিদের বাকি পরিকল্পনার কথাও জানতেন, সে বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

১৯৯০ সালে তিনি জম্মু-কাশ্মীর পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন। তার পর তাঁর কেরিয়ারে বহু কৃতিত্বের নজির রয়েছে। উপত্যকায় বহু জঙ্গি-বিরোধী অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বদগামে একটি অপারেশনে তাঁর পায়ে গুলিও লেগেছিল। এই জঙ্গি অভিযানে দক্ষতার জন্যই বহু পদকও পেয়েছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে একাধিক জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু এক বারও ধরা পড়েননি। এমনকি, সংসদ হামলায় অভিযুক্ত আফজল গুরু তাঁর নাম করে চিঠি পাঠানোর পরেও তাঁর গায়ে আঁচড় পড়েনি। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৭। অবসরের কয়েক বছর আগেই সব কৃতিত্ব খুইয়ে এখন তাঁকে জঙ্গি হিসেবে গণ্য করেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement