আত্মসমর্পণ নয়, বলেছিল দুজানা

সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ প্রাক্তন জঙ্গি খুরশিদ আহমেদ বাটের বাড়িতে আবু দুজানা ঢুকে যেতেই তখনই স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে খবর চলে যায়

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৫:১৫
Share:

শোকার্ত: জঙ্গি নেতা আবু দুজানার মৃত্যুর পরে উপত্যকা ফের উত্তপ্ত। মঙ্গলবার পুলওয়ামায় বেগমবাগে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে নিহত হন ফিরদৌস আহমেদ নামে এই কাশ্মীরি যুবক। ছবি: রয়টার্স।

বারবার একই বাড়িতে আশ্রয় নেওয়াই কি কাল হলো লস্কর নেতা আবু দুজানার!

Advertisement

খবর ছিল আগেভাগেই। তাই সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ প্রাক্তন জঙ্গি খুরশিদ আহমেদ বাটের বাড়িতে আবু দুজানা ঢুকে যেতেই তখনই স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে খবর চলে যায়। পুলওয়ামার হারকিপোরা গ্রামটিকে আধঘণ্টার মধ্যে ঘিরে ফেলে সেনা-আধা সেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানাচ্ছে, রাতের অন্ধকারে যাতে দুজানা পালাতে না পারে তার জন্য প্রথমে বাড়ির চারপাশে একটি, তারপর গ্রামে দু’টি— সব মিলিয়ে মোট তিনটি নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়। সূত্রের খবর, সাড়ে দশটায় গ্রাম ঘিরে ফেললেও, চূড়ান্ত অপারেশন চালানো হয় ভোরের দিকে। কেন এই অপেক্ষা, সেই ব্যাখ্যায় মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করার শেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য স্থানীয় মসজিদের মাইকের মাধ্যমেও একাধিকবার বার্তা দেওয়া হয়। এমনকী, আবু দুজানার কাছে যে মোবাইল ছিল, সেই মোবাইলে ফোন করে আত্মসমর্পণ করার কথাও বলা হয়। সূত্রের খবর, দুজানা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, আত্মসমপর্ণের কোনও ইচ্ছেই তার নেই। সে শহিদ হবে। তাঁকে ধরতে পারার জন্য বাহিনীকে ‘মুবারক’ও দেন দুজানা। এরপরেই ভোরবেলা চূড়ান্ত আক্রমণ শানায় সেনা। যদিও অন্য একটি অংশের ব্যাখ্যা, রাতের অন্ধকারে হামলা চালালে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই চূড়ান্ত হামলার জন্য ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়েছিল। হামলায় মারা যায় আবু দুজানা ও আর এক জঙ্গি আরিফ লিলহারি। গত কাল পুলওয়ামার হারকিপোরা গ্রামে বিক্ষোভ চলাকালীন ছররা গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছিল আকিল আহমেদ বাট নামে আর এক জঙ্গি। আজ সকালে তারও মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: শত্রু নন কিম, উল্টো মার্কিন সুরে ধোঁয়াশা

গিলগিট-বালুচের বাসিন্দা হওয়ায় আবু দুজানার মৃতদেহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মাধ্যমে পাক হাইকমিশনের হাতে তুলে দেওয়ার ইচ্ছে জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত পাক হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোনও দাবি না আসায় আজ প্রায় গোপনে আবু দুজানার দেহ কবর দিয়ে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, বুরহান ওয়ানির মৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়ে আবু দুজানার মৃত্যুকে নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে বড় মাপের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরার পথে হাঁটতে চায়নি কোনও শিবিরই।

তবে যে ভাবে এত দিন আবু দুজানা সক্রিয় ছিল, তাতে রীতিমতো অস্বস্তিতে নিরাপত্তাবাহিনী। গত ২০১০ সালে আবু পাক অধিকৃত কাশ্মীর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। গত সাত বছর ধরে সে কাশ্মীরে সক্রিয় ছিল। সাধারণত সাত বছর ধরে নজর এড়িয়ে কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া যথেষ্ট ব্যতিক্রমী ঘটনা বলেই জানাচ্ছে মন্ত্রক। দুজানার মৃত্যুর পরে এখন নিরাপত্তবাহিনীর খতম তালিকায় উপরে উঠে এল আর এক লস্কর নেতা আবু ইসমাইল ও হিজবুল ছেড়ে সদ্য আল কায়দায় যোগ দেওয়া জাকির মুসার নাম।

সংবাদ সংস্থার খবর, থমথমে কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় আজ দিনভর বন্ধ ছিল দোকানপাট, অফিস-কাছারি ও পেট্রোল পাম্প। সরকারি কোনও যানবাহন রাস্তায় নামেনি। শুধু অল্প কিছু গাড়ি চলেছে। সরকারি নির্দেশে এ দিন প্রায় সব স্কুল-কলেজই বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে নতুন করে কোনও অশান্তি না হওয়ায় দক্ষিণ কাশ্মীর ছাড়া রাজ্যের অন্যত্র সন্ধে নাগাদ পরিষেবা চালু করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন