বৃহস্পতিবার চেরাপুঞ্জি থেকে ফেরার পথেও ভাবিনি ঘুরতে এসে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। উফ্, হোটেলে সে কী দমবন্ধ পরিস্থিতি! মুহুর্মুহু বোমা, গুলির আওয়াজ। অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আধাসেনার টহলদারি। হোটেলে বন্দি দশা। ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল।
গত রবিবার আমরা পাঁচ-ছ’টি পরিবার হাবড়া থেকে রওনা হই। সোমবার গুয়াহাটি পৌঁছে পর দিনের গন্তব্য ছিল কাজিরাঙা। কাজিরাঙা থেকে শিলং। বুধবার দারুণ কেটেছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন হোটেলে ফিরছি তখনও কিছু বুঝিনি। হোটেলে ঢুকে শুনলাম স্থানীয় এক যুবককে নাকি পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। পরে জানলাম গুজব। আর তার জেরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে যা গন্ডগোল বাঁধল! আচমকা আগুনের ঝলকানি দেখে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি এলাকা ঘিরে ফেলেছে সেনা বা আধাসেনা। পরে শুনলাম পেট্রল বোমা ছোড়া হচ্ছে। আগুনের ঝলকানি তাতেই। হোটেলে শুয়ে অনেক রাত পর্যন্ত গন্ডগোলের শব্দ পেয়েছি।
ভেবেছিলাম, ঝামেলা মিটে যাবে। পর দিন সকালে মৌসিনগ্রাম বেরিয়ে পড়ি। বিকালে ফিরে বুঝতে পারি, এই ঝামেলা সহজে থামার নয়। চার দিকে থমথমে। কার্ফু জারি হয়েছে। শুধু পর্যটকদের বাস যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল। তবে হোটেল পর্যন্তও নয়। টার্মিনাল থেকে সেনার পাহারায় হোটেল পৌঁছলাম। ঢোকা মাত্র ম্যানেজার বললেন, কেউ বেরোবেন না। আলো নিভিয়ে দিন। কোনও শব্দ করবেন না। মহিলা, বাচ্চাদের অবস্থাটা ভাবুন। সকলে একটা ঘরে নিজেদের বন্দি করে রাখলাম। পর দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ সেনার পাহারায় গুয়াহাটির বাসে তুলে দেওয়া হয় আমাদের। আড়চোখে দেখলাম, আমাদের হোটেলের কাচ অনেকটা অংশ জুড়ে ভাঙা। একজন পর্যটক আতঙ্কে অসুস্থও হয়ে পড়লেন।
আরও পড়ুন: শিলংয়ে বাইরের উস্কানি: কনরাড
একটাই কথা মনে হচ্ছিল, বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।