অগ্নিকুণ্ড: ধানবাদের কাছে রাতে ড্রোন ক্যামেরায় তোলা ছবি।
উপরে নিরন্তর ছুটে চলেছে মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন। আর সেই রেললাইনের নীচে ধিকিধিকি জ্বলছে আগুন। চালক, গার্ড বা আমযাত্রীরা জানতেও পারছেন না। জানলেও তাঁরা একান্তই নিরুপায়।
ধানবাদ থেকে চন্দ্রপুরা পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার রেলপথের নীচেটা এখন এ-রকমেরই এক অগ্নিকুণ্ড। সেই আগুনে পোড়া শুকনো ঝুরঝুরে মাটির উপর দিয়েই নিত্যদিন দৌড়চ্ছে ট্রেন। রেল ও খনিকর্তাদের আশঙ্কা, খনির আগুনে পুড়ে যাওয়া আলগা মাটির উপর দিয়ে দ্রুত গতির ট্রেন চলাচল করতে গিয়ে যে-কোনও মুহূর্তেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এই বিষয়ে চরম সতর্কতা জারি করেছেন ডিরেক্টর জেনারেল অব মাইনিং সেফটি (ডিজিএমএস)। অতন্দ্র নজরদারি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই অংশে খুব ধীর গতিতে ট্রেন চালাতে বলা হয়েছে। কিন্তু রেলেরই অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠছে, রক্ষণাবেক্ষণ জোরদার করে বা আস্তে ট্রেন চালিয়ে বিপদ রোখা যাবে কি? বিপদের আশঙ্কা মুছে ফেলতে স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার বলে মনে করছে তারা।
কী ধরনের বিপদ আসতে পারে?
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, খনির যে-সব জায়গায় মাটির নীচে আগুন জ্বলছে, সেখানে মাটি খুব আলগা হয়ে যাওয়ায় ওই সব এলাকায় ভয়াবহ ধস নামতে পারে যখন-তখন। সম্ভাব্য মূল বিপদ এটাই।
‘‘খনির আগুন প্রচণ্ড তাপ তৈরি করে। কয়লা পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পরেও আগুন থেকে যায়। ফলে ওই গরমে উপরের মাটির চরিত্র বদলে ঝুরঝুরে হয়ে যায়। চাপ পড়লেই মাটি বসে যেতে থাকে,’’ বলছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের শিক্ষক গোপীনাথ ভাণ্ডারী।
কয়েক বছর আগেই রেললাইনের ওই অংশে এই পাতাল-অগ্নির বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিল ভারত কোকিং কোল লিমিটেড বা বিসিসিএল। হাওড়া-রাঁচী শতাব্দী, হাওড়া-রাঁচী ইন্টারসিটি ভায়া ধানবাদ, হাটিয়া-পাটলিপুত্র এক্সপ্রেস, গোরখপুর মৌর্য এক্সপ্রেসের মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন এখন ওই লাইন দিয়ে যাতায়াত করে। সমূহ বিপদ মাথায় নিয়েই চলছে তারা।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে একটি বৈঠক হয়েছে খনিসম্পদ মন্ত্রকের কর্তারা রেল, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। মাটির নীচেকার আগুন এবং সম্ভাব্য ধস থেকে কী ভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে, সেটাই ছিল বৈঠকের অলোচ্য। বিসিসিএলের সিএমডি গোপাল সিংহ বলেন, ‘‘ধসের আশঙ্কা থাকায় আপাতত ধানবাদ থেকে চন্দ্রপুরা পর্যন্ত ধীর গতিতে ট্রেন চালাতে বলা হয়েছে। তবু ধসের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’’
স্থায়ী প্রতিকার হবে কী ভাবে?
ওই ৩৭ কিলোমিটার রেলপথ অন্য এলাকা দিয়ে ঘুরিয়ে না-দিলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও উপায় নেই বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা। রেল সূত্রের খবর, ২০১১ সাল থেকেই এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। এর আগে দু’বার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তাঁরাও ওই এলাকা থেকে রেললাইন সরিয়ে নেওয়ার কথাই বলেছিলেন। সংসদীয় কমিটির রিপোর্টেও রাইটস-এর সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে ওই এলাকা থেকে লাইন সরানোর কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু বিপুল খরচের জন্যই লাইন সরিয়ে নেওয়ার কাজটা হয়নি। রেল মন্ত্রকের খবর, লাইন সরাতে খরচ হবে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সেই টাকার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দরবার করার কথাই ভাবছেন রেল মন্ত্রকের কর্তারা।
ধস কি আদৌ ঠেকানো যায় না?
যাদবপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের শিক্ষক গোপীনাথবাবুর দাবি, ধস আটকানোরও উপায় আছে। সে-ক্ষেত্রে এলাকায় গিয়ে মাটি পরীক্ষা করে উপায় বার করতে হবে।