—ফাইল চিত্র।
টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে দেখা গিয়েছে বহু অপরাধীর মুখোশ খুলে দিতে। এ বার তিনিই অপরাধীর ভূমিকায়। নয়ের দশকের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ইন্ডিয়া’জ মোস্ট ওয়ান্টেড-এর প্রযোজক-পরিচালক-সঞ্চালক সুহেব ইলিয়াসিকে, স্ত্রীকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল দিল্লির আদালত। সেই সঙ্গে হল ২ লক্ষ টাকার জরিমানা।
বুধবার এই সাজা শোনান দিল্লির নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত বিচারক এস কে মলহোত্র। যাবজ্জীবন কারাবাস ও জরিমানা ছাড়াও ক্ষতিপূরণ হিসেবে শ্বশুর-শাশুড়িকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রায় ১৮ বছর আগে, ২০০০ সালের ১১ জানুয়ারি, ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ইলিয়াসির স্ত্রী অঞ্জু সিংহ ওরফে আফসানকে। হাসপাতালেই মারা যান অঞ্জু। প্রাথমিক ভাবে একে আত্মহত্যা ঘটনা মনে করা হলেও, অঞ্জুর মা ও বোনের অভিযোগের ভিত্তিতে ইলিয়াসির বিরুদ্ধে পণের দাবিতে স্ত্রীকে অত্যাচারের অভিযোগ (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২-বি ধারা) আনে পুলিশ। সে ভাবেই মামলা রুজু করা হয়।
আরও পড়ুন
প্রদ্যুম্ন ঠাকুর হত্যায় ধৃত কিশোরের বিচার হবে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবেই
তবে দায়রা আদালতে মামলা চলাকালীন অঞ্জুর মা ও বোন আবেদন করেন, ইলিয়াসির বিরুদ্ধে খুনের (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা) মামলা করা হোক। সে সময় ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও ধোঁয়াশা ছিল। অঞ্জু আত্মহত্যা করেছেন, না তাঁকে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে কোন স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি পুলিশও। ফলে দায়রা আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
এর পর দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অঞ্জুর মা ও বোন। ২০১৪ সালে অঞ্জুর মা ও বোনের আবেদন মেনে নেয় হাইকোর্ট। ইলিয়াসির বিরুদ্ধে খুনের ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
আরও পড়ুন
বড়দিনের উৎসব চলবে না, স্কুলে স্কুলে চিঠি হিন্দু সংগঠনের
২০০০ সালের ১১ জানুয়ারি, ছুরিকাহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ইলিয়াসির স্ত্রী অঞ্জু সিংহ ওরফে আফসানকে। ছবি: সংগৃহীত।
স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতারির সময় ইলিয়াসি ছিলেন টেলিভিশনের দুনিয়ার অন্যতম পরিচিত মুখ। ‘ইন্ডিয়াজ মোস্ট ওয়ান্টেড’এর মাধ্যমে সে সময় দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’ ফিল্মে একটি ক্যামিও রোলেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। ফিল্মের পাশাপাশি ইন্ডিয়া টিভি-র হয়ে অভিনেতা আমন বর্মা বা শক্তি কপূরের বিরুদ্ধে স্টিং অপারেশন করেও হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ইলিয়াসি। একটি পত্রিকার সম্পাদনারও শুরু করেন তিনি।
আরও পড়ুন
বাবুঘাটে পাওয়া দেহই ঘাটশিলার সুস্মিতার
গত সপ্তাহেই সুহেব ইলিয়াসিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এ দিন সাজা ঘোষণার আগে শুনানিতে তাঁর স্ত্রীর আইনজীবী আবেদন করেন, ইলিয়াসিকে কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। এই মামলাটিকে বিরল থেকে বিরলতম বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও ইলিয়াসির হয়ে দয়াভিক্ষা করেন তাঁর আইনজীবী। তাঁর আবেদন, বছরের পর বছর ধরে এই মামলা লড়েছেন ইলিয়াসি। এ ছাড়া, তিহাড় জেলেও তিন মাস ছিলেন তিনি। তবে শেষমেশ সে সব আবেদনই খারিজ করে ইলিয়াসিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই দেন বিচারক।