শনিবার তামিলনাড়ুতে বিজয়ের প্রচারসভায় পদপিষ্টের ঘটনায় হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে। ছবি: পিটিআই।
এটা নিছক কোনও দুর্ঘটনা নয়। এর নেপথ্যে কোনও ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। তামিলনাড়ুর করুরে পদপিষ্টের ঘটনায় এমনই অভিযোগ তুলে মাদ্রাজ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তামিলাগা ভেটরি কাজ়াগম (টিভিকে)-এর প্রতিষ্ঠাতা নেতা তথা অভিনেতা ‘থলপতি’ বিজয়। তাঁর দল টিভিকে-র তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, করুরের ঘটনা কোনও দুর্ঘটনা নয়, ষড়যন্ত্রের ফল। সভায় পাথর ছোড়া এবং পুলিশের লাঠিচার্জকেও এর জন্য দায়ী করেছে টিভিকে।
ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারের জন্য ২০ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন বিজয়। এই দুর্ঘটনার জন্য তিনি অত্যন্ত ব্যথিত। এ কথাও জানিয়েছেন। বিজয় বলেন, ‘‘অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আপনাদের পরিবারের সদস্য হিসাবে, আপনাদের পাশে আছি, থাকব।’’ আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন টিভিকে নেতা। শনিবার করুরে পদপিষ্টের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ শিশু-সহ ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত শতাধিক। এদের মধ্যে দু’বছরের এক শিশুও রয়েছে।
টিভিকে-র আইনজীবী আরিবাজ়াগন এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন, তাঁরা মাদ্রাজ হাই কোর্টে আবেদন করেছেন এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) করা হোক। অথবা সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হোক। তাঁর কথায়, ‘‘করুরের ঘটনায় ষড়যন্ত্র হয়েছে। তাই আমরা মাননীয় আদালতের কাছে আবেদন করেছি রাজ্যের কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে নিয়ে তদন্ত না করিয়ে নিরপেক্ষ কোনও সংস্থার হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হোক।’’
এই পদপিষ্টের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বেশ কিছু বয়ান উঠে আসছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ভি সেন্থিলবালাজিকে যখন ‘১০ টাকার মন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করে গান ধরেছিলেন বিজয়, সেই সময় বিপুল উচ্ছ্বাস এবং আলোড়ন সৃষ্টি হয় জমায়েতে। তার পরই হঠাৎ পুলিশ লাঠিচার্জ করতে শুরু করে। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। সকলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। অনেকেই তাঁদের ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে বিজয়ের সভায় গিয়েছিলেন। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতেই অনেকের হাত থেকে ছিটকে যায় তাঁদের সন্তানেরা। ফলে অনেক শিশু পদপিষ্ট হয়।
যদিও পুলিশ দুর্ঘটনায় দায় টিভিকে-র দিকেই ঠেলেছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি জি বেঙ্কটরমন জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের সাত ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছেছিলেন বিজয়। ফলে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন, উদ্যোক্তারা জানিয়েছিলেন, ১০ হাজারের মতো মানুষের জমায়েত হতে পারে। কিন্তু সেখানে ২৭ হাজার মানুষ হাজির হন। নিরাপত্তা এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মোতায়েন ছিল ৫০০ পুলিশ। টিভিকে তাদের এক্স হ্যান্ডলে হঠাৎ করে ঘোষণা করে, দুপুর ১২টায় প্রচারসভায় আসছেন বিজয়। ফলে আরও ভিড় বেড়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের কাছে দুপুর ৩টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারসভার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল বলে দাবি ডিজির। তাঁর কথায়, ‘‘সকাল ১১টা থেকে লোকজন এসে জমায়েত করতে থাকেন। কিন্তু বিজয় আসেন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। খাবার, পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। অভিনেতা বিজয়কে দেখার জন্য রোদের মধ্যে অপেক্ষা করছিলেন লোকজন।’’