ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। —ফাইল চিত্র।
আগামী সপ্তাহেই ভারতে আসছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। দু’দিনের সফরে আগামী বুধবার (৮ অক্টোবর) দিল্লিতে পৌঁছোবেন স্টার্মার। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই প্রথম বার ভারতে আসছেন তিনি। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যচুক্তি এখনও ঝুলেই রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েন চলছে দিল্লির। এই চাপানউতরের মাঝেই সম্প্রতি ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্টার্মারের ভারত সফর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
শনিবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক থেকে শনিবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন স্টার্মার। বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দু’দেশের নাগরিকদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করার বিষয়ে কথা হবে দু’দেশের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে। পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারির বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা বৈঠকে। এর পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়ও বৈঠকে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই বৈঠকের পরে মুম্বইয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একটি আলোচনাচক্রেও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে স্টার্মারের। সেখানে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞ এবং উদ্যোগপতিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দিতে পারেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। বস্তুত, গত জুলাই মাসেই ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্টার্মারের সফরকালে ওই চুক্তির বিষয়েও মোদীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হতে পারে।
গত ২৪ জুলাই লন্ডন থেকে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে এই চুক্তির কথা ঘোষণা করেছিলেন মোদী এবং স্টার্মার। এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরে ব্রিটেনে তৈরি বা ব্রিটেন থেকে আমদানিকৃত চিকিৎসা সরঞ্জাম, বিমান সরঞ্জাম ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য আগের চেয়ে সস্তা হয়ে যাবে।ব্রিটেনে তৈরি পানীয় (সফ্ট ড্রিঙ্কস), চকোলেট, সাজগোজের সরঞ্জাম, বিস্কুট, গাড়ি, ভেড়া এবং স্যামন মাছ ভারতীয়দের জন্য অনেক সহজলভ্য হবে। এই সমস্ত পণ্যে এত দিন গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক কার্যকর থাকত। মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ফলে তা কমে দাঁড়াবে তিন শতাংশে। বৈদ্যুতিক গাড়ির শুল্ক ১১০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে আসবে।
বাণিজ্য নিয়ে ভারতের অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট। যে দেশ থেকে ভারত বেশি সুবিধা পাবে, কোনও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা না-থাকলে ভারত তার সঙ্গেই ব্যবসা করবে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক পছন্দ নয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তার জন্য ভারতের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি। ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনাও দীর্ঘ সময় থমকে ছিল। যদিও সম্প্রতি আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে কোনও রফাসূত্র এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। এ অবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ঘিরে কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পেয়েছে জনতার।