অনুপ চেতিয়া
অবশেষে আলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিল বাংলাদেশ সরকার। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে তাঁকে সিবিআইয়ের হাতে ‘প্রত্যার্পণ’ করেছে বাংলাদেশ। অপহরণ, সন্ত্রাস চালানো, তোলাবাজি ছাড়াও তার বিরুদ্ধে খুনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে এ দেশে। শুধু অনুপ নয়, তাঁর সঙ্গে নগাঁওয়ের বাসিন্দা লক্ষ্মীপ্রসাদ গোস্বামী এবং দরং-এর বাবুল গোস্বামীকেও ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ দিন সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সন্ত্রাসবাদ রুখতে তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করে মোদী তাঁকে অভিনন্দন বার্তাও জানিয়েছেন।
ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই আলফা ধারাবাহিক ভাবে চেতিয়াকে দেশে ফেরানোর দাবি তুলে এসেছে। কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়। সরকারের তরফে জানানো হয়, চেতিয়াকে দেশে ফেরানোর সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। অবশেষে আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপকে দেশে ফিরিয়ে আনা হল। আগামী বছর অসমে বিধানসভা নির্বাচন। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের ধারণা, অনুপকে দেশে ফেরানোয় আলফা প্রসঙ্গ আগামী নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
কে এই অনুপ?
১৯৯৭-এর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেতিয়া। ভুয়ো পাসপোর্ট, বিদেশি মুদ্রা এবং অস্ত্র-সহ তাঁকে ঢাকার কাছের একটি জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু সাজার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই, তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে ২০০৩-এ বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের দাবি-সহ হাইকোর্টে আবেদন করেন অনুপ। আদালত সেই দাবি মেনে নেয়। এর পর সাত বছরের সাজা শেষে তিনি বেশ কয়েক দফায় সে দেশের রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। ২০০৫, ২০০৮ এবং ২০০১-য় তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের দাবি পুনর্বিবেচিতও হয়।
অন্য দিকে, ভারত সরকারের সঙ্গে ২০১১-য় শান্তি আলোচনা শুরু হয় আলফার। সেই সময় থেকেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠতে শুরু করে। আলফার কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া, উপ-সভাপতি প্রদীপ গগৈ, উপ-সেনাধ্যক্ষ রাজু বরুয়া, বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরী, অর্থ সচিব চিত্রবন হাজরিকা, সংস্কৃতি সচিব প্রণতি ডেকারা দাবি জানাতে থাকেন, তাঁদের সাধারণ সম্পাদককে না ফেরালে এ সব আলোচনা অর্থহীন। কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর অনুপকে ফেরানোর দাবি আরও জোরালো হতে শুরু করে। বেশ কিছু দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজিজু জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁকে দেশে ফেরানো হবে। বুধবার রিজিজু জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে সিবিআইয়ের হাতে অনুপকে তুলে দেওয়া হয়েছে। অনুপকে প্রথমে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গুয়াহাটিতে আনা হবে।
অনুপের স্ত্রী মণিকা চেতিয়া দীর্ঘ দিন বাংলাদেশে ছিলেন। বর্তমানে তিনি অসমে রয়েছেন। স্বামীর দেশে ফেরার ঘটনায় তিনি আনন্দিত। তবে, যত দিন না অনুপ বাড়ি ফিরছেন তত দিন তাঁর ভেতরের অস্বস্তি কাটবে না বলে জানিয়েছেন মণিকা।