মুজফ্ফরাবাদে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদল। —ফাইল চিত্র।
প্রতিশোধের হুমকির পরে এ বার নালিশের পালা পাকিস্তানের। তাদের অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদীদের ডেরায় হামলার কথা বললেও মঙ্গলবার রাতে ভারত আদতে হামলা করেছে অসামরিক জনবসতির উপর। আর তার ‘প্রমাণ’ দিতে এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদের পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফফ্রাবাদে নিয়ে গেল পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার।
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিনের মাথায় পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পঞ্জাব প্রদেশের ন’টি জঙ্গি ডেরায় ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রকাশ্যে কবুল করছে ইসলামাবাদ। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে নয়াদিল্লিকে ‘জবাব’ বিষয়ে সেনাকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর)-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি বুধবার তিন দফায় বিবৃতি দিয়ে ৩৭ জনের মৃত্যু এবং ৫১ জনের আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত ১টা ৫ থেকে দেড়টা পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী যে ন’টি জঙ্গিডেরায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে মুজফ্ফরাবাদের দু’টি ঠিকানা। প্রথমটি নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী সওয়াই নালায় লশকর-এ-ত্যায়বার শিবির। পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের আগে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল লশকরের ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-এর ঘাতকবাহিনী। ২৬/১১ সন্ত্রাসের জঙ্গি আজমল কসাব প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এখানেই। দ্বিতীয়টি তার অদূরের মারকাজ় সঈদনা বিলালে আর এক পাক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ শিবির।
বুধবার সকাল থেকে ভারতীয় অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা শুরু করে শরিফ সরকার। ইসলামাবাদে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের (চিনের রাষ্ট্রদূত চিয়াং জাইতোং-সহ) তথ্য জানান উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার। শাহবাজ়কে ফোন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ান বলেন, পাকিস্তানের একনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে তাঁরা প্রস্তুত। রাতে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় শাহবাজ় বলেন, ‘‘ভারত এই হামলা চালিয়ে ভুল করেছে। আমাদের বাহিনী জবাব দিয়েছে।’’ কিন্তু তার আগেই রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদলকে মুজফ্রাবাদ নিয়ে যায় পাক সরকার। সওয়াই নালায় বায়াত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র লাগোয়া মসজিদ এবং মাদ্রাসা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। স্থানীয়দের একাংশকে দিয়ে বলানো হয়, সেখানে আদতে কোনও জঙ্গিশিবির ছিল না।