UP Assembly Election 2022

UP Assembly Election 2022: বিজেপি তালিকায় ৬০ শতাংশ প্রার্থী দলিত-অনগ্রসর

যোগীর শাসনে ক্ষুব্ধ ওবিসি ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে বার্তা দিতেই বড় সংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভা থেকে ওবিসি সমাজের তিন মন্ত্রী ও সাত বিধায়ককে কেড়ে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা দিয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। পাল্টা চালে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ভোটের প্রার্থী ঘোষণায় ৬০ শতাংশ আসনে ওবিসি ও দলিত শ্রেণির নেতাদের বেছে নিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। যোগী আদিত্যনাথের শাসনে ক্ষুব্ধ ওবিসি ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে বার্তা দিতেই বড় সংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আজ যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে সব চেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন পিছিয়ে থাকা জাটভ শ্রেণির নেতারা। উত্তরপ্রদেশের দলিত সমাজের অর্ধেক জাটভ সম্প্রদায়ের।

Advertisement

আজ সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের মোট ১০৭টি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। পরিসংখ্যান বলছে, প্রার্থীদের মধ্যে ৪৪ জন ওবিসি শ্রেণির ও ১৯ জন হলেন তফসিলি জাতির প্রতিনিধি। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওবিসি নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান আজ দাবি করেছেন, “প্রার্থী তালিকার অন্তত ৬০ শতাংশ ওবিসি ও দলিত শ্রেণির। পিছিয়ে থাকা শ্রেণির উন্নয়নের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে দায়বদ্ধ, তা ওই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।” আজ যে ১৯ জন তফসিলি জাতির প্রতিনিধি টিকিট পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৩ জনই জাটভ, যাঁরা অতীতে মায়াবতীর ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে এঁরা বিজেপির শক্ত খুঁটি বলে পরিচিত ছিলেন। আবার রাজ্যের মোট দলিত জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ হল জাটভ সমাজ। তাই এ বারের ভোটে তাদের ভোট নিশ্চিত করতে জাটভ সমাজের প্রার্থীদের উপর ভরসা করার ঝুঁকি নিয়েছে বিজেপি। আজ যাঁরা টিকিট পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখজনক জাটভ মুখ হলেন উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা দলের সহ-সভাপতি বেবিরানি মৌর্য। দলিত সমাজের ওই নেত্রী লড়বেন আগরা (গ্রামীণ) কেন্দ্রে। বিজেপির দাবি, জাটভ সম্প্রদায়ের মধ্যে বেবিরানির প্রভাব থাকায় তাঁকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। সূত্রের মতে, জিতলে যোগী মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বেবিরানিকে। উচ্চবর্ণের আজ যে ৪৩ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৮ জন ঠাকুর সম্প্রদায়ের। এ ছাড়া ১০ জন ব্রাহ্মণ ও আট জন বৈশ্য প্রতিনিধি রয়েছেন।

অতীতে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০১৭ সালের বিধানসভায় উত্তরপ্রদেশের জাতপাতের রাজনীতির চেনা ছক অনেকটাই ভাঙতে সক্ষম হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। মূলত হিন্দুত্বের হাওয়া তুলে ছোট ছোট দলিত সম্প্রদায় ও অনগ্রসর শ্রেণিকে হিন্দুত্বের বৃহত্তর ছাতার তলায় নিয়ে আসতে সচেষ্ট হয় বিজেপি। ফলে মায়াবতী যেমন জাটভ ভোট ব্যাঙ্ক হারান, সমাজবাদী পার্টি হারায় তাঁদের যাদব ভোট। ফলে গত দুই লোকসভা ও বিধানসভায় বাকি সব আঞ্চলিক দলকে হেলায় হারিয়ে এক তরফা উত্তরপ্রদেশ দখল করতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে যোগী শাসনে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে। ঠাকুরদের প্রতিপত্তি যেমন লাফ দিয়ে বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দলিত ও পিছিয়ে থাকা শ্রেণির উপরে শোষণ ও অত্যাচারের ঘটনা। ফলে ক্রমশ বিজেপির উপর থেকে আস্থা হারাতে থাকে ওবিসি ও দলিত সমাজ। তারই মধ্যে করোনা কালে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া রাজ্যের সর্বত্রই।

Advertisement

ওবিসি ভোটব্যাঙ্ক যে ক্রমশ দলের পিছন থেকে সরে যাচ্ছে, তা বুঝেই ডাক্তারিতে ওবিসি সমাজের জন্য আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয় মোদী সরকার। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় উত্তরপ্রদেশের একাধিক পিছড়ে বর্গের নেতাকে। ওবিসি মন পেতে রাজ্যের হাতে ওবিসি তালিকা তৈরির ক্ষমতা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংশোধনের নির্দেশ দেয় সরকার। এ সব পদক্ষেপের পরেও ওবিসি সমাজের মন যে পাওয়া যাচ্ছে না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সম্প্রতি তিন ওবিসি মন্ত্রী যোগী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়া থেকেই। বিশেষ করে স্বামীপ্রসাদ মৌর্য বিজেপি ছেড়ে বেরিয়ে আসায় পূর্বাঞ্চল এলাকায় বিজেপি বড় ধাক্কা খেতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। স্বামীপ্রসাদের অনুগামীরা পূর্বাঞ্চলের অন্তত একশোটি আসনে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকেন। আশাবাদী সমাজবাদী শিবিরের বক্তব্য, পূর্বাঞ্চল এলাকায় বিজেপির ওবিসি-দলিত ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙন সুনিশ্চিত হলেই যোগীর দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে আসাকে রোখা সম্ভব হবে। আজ আসন ঘোষণার পরে ধর্মেন্দ্র প্রধান জানান, একাধিক অসংরক্ষিত আসনে এমবার ওবিসি ও দলিত শ্রেণির নেতাদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। আগামী তালিকাতেও এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। যা দেখে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার ব্যাখ্যা, দলিত ভোট ব্যাঙ্ক যে অনেকটাই সরে এসেছে, এটা তারই প্রমাণ। বার্তা দিতে তাই অসংরক্ষিত আসনেও দলিত-ওবিসি-দের প্রার্থী করতে হচ্ছে দলকে। কিন্তু ওই ঝুঁকি কতটা ইতিবাচক ফলে দেবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে দলের অভ্যন্তরেই। কারণ, প্রথাগত ভাবে উচ্চবর্ণ এবং বৈশ্যরাই বরাবর বিজেপিকে সমর্থন করে এসেছে। দলের এই কৌশলে তারা নিজেদের বঞ্চিত মনে করবে, এমন আশঙ্কা থেকেই যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন