ক্ষতির মুখে হিরে ব্যবসা। — ফাইল চিত্র।
ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক। আর এর জেরেই মাথায় হাত পড়েছে সুরতের হিরে ব্যবসায়ীদের। বড়দিন উপলক্ষে মার্কিন গ্রাহকদের থেকে অগ্রিম পাওয়া বরাতগুলির বেশির ভাগই বাতিল হয়ে গিয়েছে। ফলে আপাতত হিরে কাটাই এবং গয়না তৈরির কাজ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছেন সুরতের বহু ব্যবসায়ী।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনের দাবি, অতিরিক্ত শুল্কের কারণেই আমেরিকায় হিরে রফতানি মুখ থুবড়ে পড়েছে। রত্ন ও গয়না রফতানি প্রচার কাউন্সিল (জিজেইপিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আমেরিকার মোট হিরে আমদানির ৬৮ শতাংশ গিয়েছে ভারত থেকে। দামের নিরিখেও মোট হিরের ৪২ শতাংশ রফতানি হয়েছে ভারত থেকেই। সেই ভারতের উপর সম্প্রতি অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ এবং আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চেপেছে। আর তাতেই বিপত্তি। অন্য দিকে, আমেরিকায় হিরে রফতানির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইজরায়েল (মোট মূল্যের ২৮ শতাংশ), অথচ ইজরায়েলের উপর ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করেছেন মাত্র ১৯ শতাংশ।
সুরতের হিরে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সারা বছরে যত ব্যবসা হয়, তার প্রায় অর্ধেকই হয় বড়দিনের মরসুমে। এই সময় সুদূর মার্কিন মুলুক থেকেও হিরের বরাত আসে। কিন্তু শুল্কযুদ্ধের জেরে সেই ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। প্রতিযোগিতা বেড়েছে মার্কিন বাজারেও। একের পর এক অগ্রিম বরাত বাতিল হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এমনটা চলতে থাকলে অচিরেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের হিরে রফতানি।
সুরতের ধর্মনন্দন ডায়মন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর হিতেশ পটেল। তাঁর ব্যবসার মোট আয় প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকা। হিতেশের কথায়, ‘‘গত কয়েক বছরে আমেরিকায় রফতানি এমনিতেই ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। কারখানাগুলিতে উৎপাদনও ৩০-৩৫ শতাংশ কমেছে। এখন বাড়তি শুল্ক আরোপের জেরে রফতানি নতুন করে কমে যাবে।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে সাড়ে চার কোটি টাকার স্যুটটি পরেছিলেন, সেটি বানিয়েছিল এই হিতেশের সংস্থাই। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামেও এসেছিলেন। কিন্তু এখন কী হবে, জানেন না তিনিও।
হিরে ব্যবসায় আর এক উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান কিরণ জেম্সের মালিক বল্লভভাই লাখানি বলেন, “আমরা আমাদের পণ্যের ৭০ শতাংশ আমেরিকায় রফতানি করি। কিন্তু বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমেরিকায় আমাদের রফতানি ইতিমধ্যেই ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। এখন নতুন করে শুল্ক আরোপের কারণে আমরা আরও চিন্তিত।” আপাতত ২৭ অগস্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সুরতের হিরে ব্যবসায়ীরা। ওই দিন থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। শুল্কের কিছু অংশ তাঁদেরও বহন করার জন্য অনুরোধ করা হবে।
জিজেইপিসির চেয়ারম্যান কিরীট বনসালিও একবাক্যে স্বীকার করছেন, ভারতের রত্ন ও গয়না খাতে উচ্চ শুল্ক আরোপের জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে সুরত এবং মুম্বই। ভারতে তৈরি হিরের বৃহত্তম রফতানি বাজার আমেরিকা। ভারতের বার্ষিক রত্ন ও গয়না রফতানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ যায় মার্কিন মুলুকে। ফলে সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে সামগ্রিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে ভারতের রত্ন ও গয়না প্রস্তুতকারী শিল্প। আগামী চার-পাঁচ মাসে চাকরি হারাতে পারেন গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থানে হিরে কাটাই এবং পালিশের কাজ করা অন্তত ১,২৫,০০০ জন শ্রমিক। রফতানি হ্রাস, অন্য দিকে এত মানুষ চাকরি হারানোর ফলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও।