পুরো মুসলিম সমাজের সামনে স্বামীকে তালাক দিতে চান আমরিন বানো।
স্ত্রী পছন্দ নয়? চিঠিতে তিন তালাক লিখে পাঠিয়ে দেন বেপরোয়া স্বামী। পণের টাকা আদায় হয়নি? হোয়াটসঅ্যাপেই তিন তালাক লিখে সম্পর্কে দাঁড়ি টানতে হাত কাঁপে না। কখনও তালাক দেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া।
তালাক নিয়ে মুসলিম পুরুষ সমাজের মুখে এ বার মোক্ষম ঘা দিলেন আমরিন বানো। উত্তরপ্রদেশের মেরঠের বাসিন্দা আমরিন জানালেন, পুরো মুসলিম সমাজের সামনে স্বামীকে তালাক দিতে চান তিনি। কারণ? ২৪ বছরের আমরিন জানালেন, প্রতি দিন শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী। স্বামীর কারণেই মিসক্যারেজও হয়েছে তাঁর।
২০১২ সালে পাশের গ্রামের সাবিরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আমরিনের। সাবিরের ভাই শাকিরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আমরিনের ছোট বোন ফারহিনের। আমরিন পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, বিয়ের পর থেকেই তাঁদের দুই বোনকে মারধর করতেন সাবির আর শাকির। ২০১৫-তে একবার দুই বোনকে বাড়ি থেকে বের করেও দিয়েছিলেন ওই দুই ভাই। তারপর অবশ্য ফের শ্বশুড়বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন আমরিন ও ফারহিন। তবে এর পরেও নির্যাতন থেমে থাকেনি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফারহিনকে তিন তালাক দেন তাঁর স্বামী শাকির। এর পরেই দুই বোন, সাবির ও শাকিরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: ৩ তালাকে রাজনীতি নয়: মোদী
তিন তালাকের প্রতিবাদে মহিলারা। ছবি: পিটিআই
কিন্তু আমরিনের অভিযোগ, বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। সংবাদ মাধ্যমকে আমরিন জানান, ‘‘আমার স্বামী আমাকে কোনও টাকা পয়সা দিতেন না। আমি ওঁকে জেলে পাঠাতে চাই। পুরো মুসলিম সমাজের সামনে আমি তালাক দিতে চাই।’’
কেন পুরুষরাই শুধু তিন তালাক দিয়ে বিচ্ছেদ পাবেন? খুব সহজেই পুরুষরা অপছন্দের মেয়েদের হাত থেকে মুক্তি পান। কিন্তু মেয়েদের তেমন কোনও অধিকার নেই। তাই সকলের সামনেই তিন তালাক দিয়ে স্বামীর হাত থেকে মুক্তি চান তিনি। বুধবার থানায় গিয়ে এমনটাই জানান আমরিন।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ আইনি পথে তাঁকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছে।
আরও পড়ুন: কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ তিন তালাক দিলেন স্বামী!
দেশে তিন তালাক প্রথা নিয়ে বহু দিন ধরেই চলছে বিতর্ক। বারবার এ নিয়ে সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। মুসলিম মহিলাদের অধিকার রক্ষা করতেই তিনি তিন তালাক উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড জানিয়েছে, কোনও বৈধ কারণ ছাড়া তিন তালাকের মান্যতা দেওয়া হবে না। যাঁরা শরিয়তি আইন লঙ্ঘন করে তালাক দেবেন, তাঁদের সামাজিক ভাবে বয়কট করা হবে। বোর্ড জানায়, তিন তালাক নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। এ বিষয়ে তারা একটা আচরণবিধি চালু করবে। তবে তিন তালাক নিয়ে তারা বাইরের কোনও হস্তক্ষেপে চায় না বলেই জানিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।
তিন তালাক বন্ধের দাবিতে একাধিক সংগঠনের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে আগামী ১১ মে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হচ্ছে।