Uttarakhand

‘পকেটের মোবাইল বাঁচিয়ে দিয়েছে সুড়ঙ্গে আটক ১২ জনকে’,  বলছেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা রাকেশ

রাকেশ বলেন, “বিষয়টি ভাল করে বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড়িয়ে সুড়ঙ্গে জল, কাদা বড় বড় পাথর ঢুকতে শুরু করল। একেবারে আমাদের উপর এসে যেন আছড়ে পড়ল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

দেহরাদূন শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:০৭
Share:

তপোবনের আরও একটি সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারের কাজ চলছে। ছবি: পিটিআই।

একটাই ফোন কল, আর সেই কলেই আটকে থাকা ১২ শ্রমিকদের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছে। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পেরেছেন। এক সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের শিকার নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎ প্রকল্পের এক কর্মী রাকেশ ভট্ট।

জোশীমঠেই বাবা বদ্রি বিশাল মন্দিরের কাছেই তাঁর বাড়ি। তিনি এবং আরও ১১ জন কর্মী তপোবন বিদ্যুৎপ্রকল্পের জন্য তৈরি একটি সুড়ঙ্গে কাজ করছিলেন রবিবার। রাকেশ জানান, সকাল তখন ১০টা। হঠাৎই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পান কর্মীরা সকলেই। তাঁদের সুড়ঙ্গ থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছিল।

রাকেশ বলেন, “বিষয়টি ভাল করে বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড়িয়ে সুড়ঙ্গে জল, কাদা বড় বড় পাথর ঢুকতে শুরু করল। একেবারে আমাদের উপর এসে যেন আছড়ে পড়ল। সেই সঙ্গে জলের উচ্চতাও বাড়তে শুরু করেছিল।” সামনেই একটা জেসিবি ছিল। যেটা নিয়ে কর্মীরা কাজ করছিলেন। জল বাড়তে থাকায় সকলেই জেসিবি-র উপরে উঠে পড়েন। সুড়ঙ্গের ছাদের সঙ্গে লেগে থাকা লোহার রড ধরে একে একে ঝুলে পড়েন কর্মীরা।

রাকেশ বলেন, “মুহূর্তেই চার দিকে অন্ধকার নেমে এসেছিল। আমরা কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। শুধু আওয়াজ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম সকলেই ঠিক আছে কি না।” ক্রমেই জল বাড়তে বাড়ছিল। সঙ্গে কাদার স্তরও। রাকেশ জানান, হঠাৎই তাঁদের মধ্যে এক জন পকেট রাখা মোবাইলটা কোনও রকমে খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটাই যেন আমাদের কাছে ‘বিশল্যকরণী’র মতো কাজ করেছিল, বলেন রাকেশ।

তিনি বলেন, “সেই ফোনে নেটওয়ার্ক থাকায় সেটা আমাদের বাঁচার শক্তিকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল ম্যানেজারকে ফোন করা হয়। আমাদের অবস্থার কথা জানানো হয় তাঁকে। রাকেশ আরও বলেন, “অন্য দিকে, জল এবং কাদার স্তর বাড়তে বাড়তে আমাদের গোটা শরীরকে ঢেকে ফেলেছিল। শুধু মাথাটা কোনও রকমে তুলে রেখেছিলাম। আর প্রার্থনা করছিলাম আমাদের যেন উদ্ধার করা হয়।”

প্রচণ্ড ঠান্ডায় শরীরের নীচের অংশ অসাড় হয়ে আসছিল। রক্তসঞ্চালন ঠিক মতো হচ্ছিল না। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, এই বুঝি হাতটা লোহার রড থেকে ছেড়ে যাবে। কিন্তু নিজের এক বছরের সন্তানের কথা ভেবে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান রাকেশ। তিনি বলেন, “সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় সাত ঘণ্টা এ ভাবে রড ধরে ঝুলেছিলাম। সকলেরই একই হাল। কিন্তু কেউ বাঁচার লড়াই থামাইনি।”

অন্য দিকে, জেনারেল ম্যানেজার ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা উদ্ধারকারীদের খবর দেয়। আইটিবিপি-র জওয়ানরা বহু চেষ্টার পর সুড়ঙ্গে ঢুকতে পারেন। কারণ সুড়ঙ্গ মুখ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা একে একে ১২ জনকেই জীবিত উদ্ধার করেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রবিবার উত্তরাখণ্ডে হড়পা বানে চামোলির বহু এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। নিখোঁজ এখনও দেড় শতাধিক। ইতিমধ্যেই ৩২ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এক সুড়ঙ্গ থেকে ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও তপোবনের আরও একটি সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য দিনরাত কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা। সময় যত বাড়ছে, ততই আশঙ্কা বাড়ছে আটকে থাকা ওই শ্রমিকদের নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন