Narendra Modi

মোদী ২-এর বর্ষপূর্তিতে জুটল ফাঁপা ভরসাবার্তা

দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বছরে মোদী সরকার মূলত বিজেপি-আরএসএসের কর্মসূচি রূপায়ণে মন দিয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০৪:২২
Share:

ছবি: পিটিআই।

লকডাউনের জেরে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে বিপুল সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তা অবশেষে মেনে নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বর্ষপূর্তিতে দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি, ‘‘আমাদের শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক, হস্তশিল্পী ও ক্ষুদ্র শিল্পের কারিগর, হকার বন্ধুরা সহ প্রতিটি দেশবাসী চূড়ান্ত সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।’’

Advertisement

মোদী চিঠিতে এ কথা বললেও তাঁর দল এবং মন্ত্রীরা কিন্তু সে সবে পাত্তা দিতে নারাজ। বরং তাঁরা আজ দেশ জুড়ে মূলত ডিজিটাল মাধ্যমের হাত ধরে সাড়ম্বরে দিনটি পালন করেছেন। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা বলছে, দেশ জুড়ে যখন পরিযায়ী শ্রমিকরা রাস্তায় হাঁটছেন, বহু লোক মারা যাচ্ছেন, অর্থনীতি তলানিতে নামার নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ছে, সেখানে মোদী সরকার কী ভাবে বর্ষপূর্তির সাফল্য উদ্‌যাপন করে? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়নি বিজেপি। উল্টে পরিযায়ী শ্রমিকদের মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার দাবি তোলায় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে ‘বক্রদ্রষ্টা’ বলে বিদ্রুপ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক মহল।

এ দিন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আক্রমণকে চাপা দিতে গিয়ে কংগ্রেসকেই বিঁধেছেন অমিত। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, মোদী সরকার গত এক বছরে ৩৭০ রদ, তিন তালাক নিষিদ্ধ, রামমন্দির তৈরির পথ ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এনে ‘স্বাধীনতার পরের ভুল’ সংশোধন করেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: আনলকডাউন শুরু হচ্ছে কাল, তবে কন্টেনমেন্ট জ়োন লকডাউনেই

দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বছরে মোদী সরকার মূলত বিজেপি-আরএসএসের কর্মসূচি রূপায়ণে মন দিয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন। কংগ্রেস বলেছে, স্বাধীনতার পর থেকে গড়ে ওঠা একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে বিক্রি করে দেশের সর্বনাশ করেছে মোদী সরকার। ফলে তাদের ভুল সংশোধনের দাবি হাস্যকর। মোদী জমানার ভুলের মাসুল গুণতে হচ্ছে গোটা দেশকে। আগামী দিনেও হবে।

ছয় মিথ বনাম ছয় বাস্তব
মোদী সরকার সম্পর্কে কংগ্রেস

মিথ: সব কা বিকাশ
বাস্তব: বেকারত্বের হার ২৭%, জিডিপি সংকোচনের মুখে, ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ ছ’বছরে বেড়েছে ৪২৩%, প্রতিশ্রুতি ছিল ডলারের দাম হবে ৪০ টাকা, বাস্তবে তা ৭৫ টাকার বেশি।

মিথ: সবকা সাথ
বাস্তব: শুধু ‘মিত্র’-দের সাথ। ৭৩ বছরে আয়ের বৈষম্য সর্বাধিক। ১% মানুষের হাতে দেশের ৪৫% সম্পদ, গ্রামের দারিদ্র বেড়ে ৩০%, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প ও স্টেট ব্যাঙ্কের জমায় সুদ কমার ফলে ৪৪,৬৭০ কোটি টাকা আয় কমেছে।

মিথ: চাষিদের আয় দ্বিগুণ
বাস্তব: কৃষি অর্থনীতিতে ধস।

মিথ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধান সেবক
বাস্তব: স্বৈরতান্ত্রিক সম্রাট, নোট বাতিল, লকডাউন, জিএসটি সবেতেই একতরফা সিদ্ধান্ত।

মিথ: অচ্ছে দিন
বাস্তব: কালো টাকা উদ্ধার, ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সব স্লোগানই মিথ্যে প্রমাণিত। এটাই সাচ্চে দিন।

মিথ: মজবুত নেতৃত্ব
বাস্তব: অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত, দেশের সুরক্ষার কথা বললেও জওয়ানদের মৃত্যু বেড়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে বরাদ্দ কমেছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি।

বর্ষপূর্তির ২৪ ঘণ্টা আগেই খবর এসেছে, লকডাউনের আগেই আর্থিক বৃদ্ধির হার এতখানি নীচে নেমেছে, যা ২০০৮-এর বিশ্বজোড়া আর্থিক সঙ্কটের পরে হয়নি। লকডাউনের আগেই নতুন লগ্নি ও বাজারের চাহিদা নিম্নগামী। এর ফলে আগামী দিনে অর্থনীতির হাল কোথায় পৌঁছবে, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস আজ সাংবাদিক বৈঠক করে মোদী সরকার সম্পর্কে ছ’টি মিথ ও ছ’টি বাস্তব তুলে ধরেছে।

আরও পড়ুন: করোনার থেকে চার কদম এগিয়ে দিল্লি, দাবি কেজরীর

কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মোদী ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। আগেই বেকারত্বের হার ৬.১% ছুঁয়ে ৪৫ বছরের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। এখন বেকারত্বের হার ২৭%-এরও বেশি।’’

দেশজোড়া সঙ্কটের কথা মেনেও মোদীর দাবি, অর্থনীতি চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে ভারত নজির তৈরি করে গোটা বিশ্বকে চমকে দেবে। কী ভাবে? প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, নতুন যুগের পরিকাঠামো তৈরির প্রকল্প চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়ার পথে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রেও সংস্কার হচ্ছে। ফলে চাষিরা বাজারে ফসলের দাম পাবেন।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ— “মোদী ২.০-এর প্রথম বছর দেশের নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ তামাশা, কিন্তু তার মূল্য সর্বনিম্ন। এই মহাসঙ্কট ও যন্ত্রণার সময় সরকারের বর্ষপূর্তির ঢাক পেটানোটাই নির্লজ্জ আচরণ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন