holi

সুন্দরীদের হাতে যুবকদের প্রহার থেকে কামদেবের পুজো, হোলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিচিত্র কাহিনি

বৃন্দাবনের বাঁকেবিহারী মন্দিরে হোলিকে বলা হয় ‘ফুলহোলি’। খেলার মূল উপকরণ গুলাল তৈরি হয় মূলত ফুলের পাপড়ি আর কেশর দিয়ে। পাশাপাশি, সরাসরি ফুল ব্যবহার করেও এখানে হোলিতে রংখেলা হয়।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২০ ১০:৩০
Share:
০১ ১৯

বাঙালির রঙিন হয়ে ওঠার পার্বণ দোলপূর্ণিমার বসন্তোৎসব। শুধু ফাগ নয়। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে এই পার্বণ মনের রঙে রঙিন হয়ে ওঠারও।

০২ ১৯

বাংলা-সহ পূর্ব ভারতের বাইরে এক বৃহত্তর অংশে রঙের উৎসবের পরিচয় ‘হোলি’। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে পৌরাণিক অনুসঙ্গ।

Advertisement
০৩ ১৯

সংস্কৃত ‘হোলিকা’ শব্দের অপভ্রংশ ‘হোলি’। দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর আদেশ অমান্য করে বিষ্ণুর উপাসনা করতেন তাঁর পুত্র প্রহ্লাদ। বহু চেষ্টার পরেও ছেলের মন থেকে বিষ্ণুভক্তি দূর করতে ব্যর্থ হলেন দৈত্যরাজ। তখন তিনি এক নৃশংস উপায়ের কথা ভাবলেন।

০৪ ১৯

ভাগবৎপুরাণে বলা হয়েছে, বোন হোলিকাকে ডাকলেন হিরণ্যকশিপু। এক বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন হোলিকা। আগুন তাঁর কোনও ক্ষতি করতে পারত না। তিনি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে বসলেন প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে। এ বারেও ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে রক্ষা পেলেন ভক্ত প্রহ্লাদ। আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেলেন হোলিকা।

০৫ ১৯

বার বার হিরণ্যকশিপুর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছেন ভগবান বিষ্ণু। পরে তিনি নৃসিংহ বা নরসিংহ অবতারে অবতীর্ণ হয়ে হত্যা করেন হিরণ্যকশিপুকে। পুরাণের হোলিকা-দহনের আখ্যান থেকেই হোলি উৎসব। বাংলার ন্যাড়াপোড়ার মত দেশের অন্যান্য অংশে হয় হোলিকা-দহন। যার অর্থ হল সব অশুভ জিনিসকে পুড়িয়ে পরিবেশকে বিশুদ্ধ করা।

০৬ ১৯

হোলিকা-দহনের দিন পালিত হয় ‘ছোটি হোলি’ অর্থাৎ অল্পবিস্তর রং খেলা। পরদিন মূল ‘হোলি’ উৎসব। যে পার্বণে বাঁধনছাড়া রঙের খেলায় মেতে ওঠেন আপামর মানুষ। বৈচিত্রে ভরা ভারতে হোলি উৎসবের বৈশিষ্ট্যও স্থানভেদে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এক এক জায়গায় রংখেলার ধরন এক এক রকম।

০৭ ১৯

হোলি উৎসবের মূল কেন্দ্র হল ব্রজভূমি বা বৃন্দাবন ও মথুরার বিস্তীর্ণ অংশ। বৃন্দাবনের বাঁকেবিহারী মন্দিরে হোলিকে বলা হয় ‘ফুলহোলি’। খেলার মূল উপকরণ গুলাল তৈরি হয় মূলত ফুলের পাপড়ি আর কেশর দিয়ে। পাশাপাশি, সরাসরি ফুল ব্যবহার করেও এখানে হোলিতে রংখেলা হয়।

০৮ ১৯

হরিয়ানার বিভিন্ন অংশে প্রচলিত ‘ধুলণ্ডী’ হোলি। প্রাচীন লোকরীতি অনুযায়ী, এ দিন জন্মাষ্টমীর মত মানবপিরামিডের উপর ভর করে ক্ষীর বা ননীর হাঁড়িও ভাঙা হয়।

০৯ ১৯

মহারাষ্ট্র, গোয়া এবং মধ্যপ্রদেশের প্রাচীন রীতি হল ‘রংপঞ্চমী’। সাধারণত হোলির পাঁচদিন পরে এই পার্বণে পালিত হয় এই রঙের উৎসব। তাই এর নাম ‘রংপঞ্চমী’। মহারাষ্ট্র ও গোয়ার উপকূলবর্তী অংশে মৎস্যজীবীদের কাছে হোলি ‘শিমগা’ বা ‘শিমগো’ বলেও পরিচিত।

১০ ১৯

তবে এখন শহুরে অঞ্চলে মূল হোলি উৎসবের চাপে অনেকটাই কোণঠাসা এই রংপঞ্চমী। গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও এখনও পালিত হয় এই রীতি।

১১ ১৯

শ্রীরাধিকার জন্মস্থান বলে পরিচিত আজকের উত্তরপ্রদেশের বরসানায় রঙের উৎসব আবার পরিচিত ‘লাথমার হোলি’ নামে। প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, আজও হোলির দিন শ্রীকৃষ্ণের গ্রাম নন্দগাঁও থেকে বরসানায় রং খেলতে আসেন যুবকরা। কিন্তু রাধিকার গ্রামের মেয়েরা ‘প্রতিশোধ’ নেয়। কারণ, রাধিকাকে বরাবরের জন্য ফেলে চলে গিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই ‘অবিচার’-এর প্রতিশোধস্বরূপ বরসানার মেয়েদের কিল, চড়, লাথি বর্ষিত হয় নন্দগাঁও-এর যুবকদের উপর।

১২ ১৯

প্রচলিত রীতি মেনে প্রমীলাবাহিনীর প্রহারে বাধা দেন না যুবকরা। তবে আদতে সব মজা ও রসিকতার ছলে হওয়ার কথা হলেও রংখেলার এই ধরন ঘিরে ঝামেলা হওয়ার নজিরও বিরল নয়।

১৩ ১৯

পর দিন পালা বরসানার ছেলেদের। তারা দল বেঁধে যায় নন্দগাঁওতে। না‚ এবার আর লাথালাথি নয়। এবার তাদেরকে পলাশ ফুলের রং থেকে তৈরি ‘কেসুদো’ দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় নন্দগাঁও-এর মেয়েরা। অর্থাৎ‚ লাথালাথির হোলির মধুরেণ সমাপয়েৎ হয় পলাশের রঙে।

১৪ ১৯

পঞ্জাবে আবার রঙের উৎসবে সঙ্গে জড়িয়ে শরীরচর্চাও। মূল হোলি উৎসবের পরে শুরু হয় এই পার্বণ, যার প্রচলিত নাম ‘হোলা মোহাল্লা’। দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিংহ এই উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। তিনদিন ধরে এই অনুষ্ঠানে দেখানো হয় নানারকম শারীরিক কসরত। এছাড়াও থাকে লঙ্গরখানা। সেখানে রান্না করে খাওয়ানো হয় নরনারায়ণকে।

১৫ ১৯

তামিলনাড়ুতে বসন্তবরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কামদেব। দোল বা হোলি উৎসব এখানে পরিচিত ‘কামান পান্ডিগাই’ বা ‘কামাবিলাস’ বা ‘কাম দহনম’ নামে। এই ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পৌরাণিক কাহিনি।

১৬ ১৯

পুরাণে বর্ণিত, শিবের তপস্যাভঙ্গ করতে গিয়ে তাঁর তৃতীয় নেত্রের আগুনে ভস্ম হয়ে যান কামদেব। পরে কামদেবের স্ত্রী রতির প্রার্থনায় শিব ফের জীবিত করে তোলেন কামদেবকে।

১৭ ১৯

এই কাহিনি মনে রেখে ভারতের দাক্ষিণাত্যে হোলি উৎসব কামদেবকে উৎসর্গ করা হয়। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, হোলির দিন মহাদেবের কৃপায় নতুন জীবন লাভ করেন কামদেব।

১৮ ১৯

বিহারে আবার হোলিকে বলা হয় ‘ফাগওয়া’ বা ‘ফাগু পূর্ণিমা’। মূলত ফাগ বা আবির থেকেই কথাটি এসেছে। আবার অনেকের মত, ‘পুতনা’ শব্দ থেকে এসেছে ‘ফাগওয়া’। এখানে হোলিকার বদলে রঙের উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে বালক শ্রীকৃষ্ণের হাতে পুতনা-সংহারের পর্ব।

১৯ ১৯

এ ভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিচিত রঙের উৎসব। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, অন্য যে কোনও উৎসবের মতো হোলি-ও জীর্ণ পুরাতনকে যৌবন ও প্রেমের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দিয়ে নতুনকে আবাহনের উৎসব। (ছবি: আর্কাইভ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement