পাশে নেই দল, বরুণ জনতার দরবারে

দল পাশে থাকবে না বুঝতে পেরে এ বার জনতার আদালতে নিজের মামলার ওকালতিতে নামলেন বরুণ গাঁধী। যৌন ফাঁদে পা দিয়ে তিনি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন বলে দু’দিন আগে অভিযোগ তুলেছেন প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদবরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৩
Share:

দল পাশে থাকবে না বুঝতে পেরে এ বার জনতার আদালতে নিজের মামলার ওকালতিতে নামলেন বরুণ গাঁধী।

Advertisement

যৌন ফাঁদে পা দিয়ে তিনি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন বলে দু’দিন আগে অভিযোগ তুলেছেন প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদবরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অভিযুক্ত দালাল অভিষেক বর্মার প্রাক্তন সহযোগী এডমন্ড অ্যালেন গত সেপ্টেম্বরে নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে সব জানানো সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী বরুণ-সহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। কালই সিবিআই জানিয়েছে, তারা আগে থেকেই ওই মামলার তদন্ত করছে। এখন বরুণের বিষয়টি সামনে আসায় সেটিও সিবিআইয়ের তদন্তের আওতায় আসতে চলেছে। দলীয় ভাবে বরুণের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তবে নামকে ওয়াস্তে। বরুণকে দলের পক্ষ থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ঘটনার দায় বরুণকেই নিতে হবে। বরুণ-ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, উত্তরপ্রদশে বরুণকে রুখতে বিজেপির একাংশের মদতেই এ ভাবে সরব হয়েছেন প্রশান্ত ভূষণরা। এই অবস্থায় অভিযোগ খণ্ডনে করতে নিজেই আসরে নেমেছেন বরুণ। দেশবাসীর উদ্দেশে একটি দু’পাতার চিঠি প্রকাশ করেছেন আজ। তাতে সমস্ত অভিযোগ ভুয়ো ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সুলতানপুরের এই বিজেপি সাংসদ। তাঁর দাবি, কোনও প্রমাণ ছাড়াই স্রেফ অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।

বরুণের দাবি, সংসদের রেকর্ড বলছে, তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির কোনও বৈঠকে ছিলেন না। তবে অন্যান্য মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির কিছু বৈঠকে ছিলেন। তবে তার সংখ্যাও বেশ কম। তাঁর বক্তব্য, তিনি ওই সব বৈঠকে কোনও বিশেষ তথ্য জানার জন্যও কোনও দিনই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে চাপ দেননি। বরুণ লিখছেন, ‘বৈঠকগুলিতে হাতে গোনা উপস্থিতিই বুঝিয়ে দিচ্ছে আমার কোনও গোপন উদ্দেশ্য ছিল না। তা ছাড়া তখন আমি প্রথম বারের সাংসদ। ফলে আমার পক্ষে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য জোগাড় করার ক্ষমতাও ছিল না। আমি কিছু ফাঁস করব, এমন পরিস্থিতিই ছিল না।’’ যদিও প্রশান্ত ভূষণদের দাবি, বরুণ কী ভাবে তথ্য ফাঁস করেছেন তার পুরো খতিয়ান রয়েছে সিবিআই ও ইডির কাছে। বরুণের যুক্তি, ‘‘আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে কি গোয়েন্দারা এত দিন আমাকে ছেড়ে দিতেন?’’ ‘ভিত্তিহীন’ এই অভিযোগের কারণে পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন সমস্যার মুখে বলেও চিঠিতে স্বীকার করেছেন বরুণ।

Advertisement

গোটা পর্বে মোটেই অখুশি নয় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। গত কয়েক মাস ধরে বরুণ যে ভাবে নিজেকে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির মুখ হিসেবে তুলে ধরছিলেন তাতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছিল দলীয় নেতৃত্বকে। নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরে গিয়েও নিজের জন্য একপ্রস্ত দরবার করে এসেছেন তিনি। এ সব মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছিলেন না অমিত শাহ, অরুণ জেটলিরা। যে কারণে বরুণ বিপাকে পড়া সত্ত্বেও বাঁচাতে এগোচ্ছেন না দলের কেউ। উল্টে দল মনে করছে, প্রতিরক্ষা কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাওয়ায় এখন নৈতিক কারণেই উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে সরে আসতে হবে বরুণকে। দলের এই মনোভাব বুঝতে পেরেই বরুণ ভরসা রাখছেন জনতার আদালতে।

এ সব দেখে বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘উত্তরপ্রদেশ অনেক দূর। আপাতত নিজের ঘর বাঁচাক বরুণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন