দুর্ঘটনাগ্রস্ত: লাইনচ্যুত ট্রেনের বগি। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মানিকপুর স্টেশনে। ছবি: এএফপি।
মন্ত্রী থেকে নানা স্তরে কর্তা বদল সত্ত্বেও রেল পরিষেবার উন্নতির দেখা নেই, ঠেকানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনাও।
শুক্রবারেও উত্তর-মধ্য এবং পূর্ব উপকূল রেলের দু’টি জায়গায় দু’টি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। তার একটি উত্তর-মধ্য রেলের পটনাগামী যাত্রিবাহী ভাস্কো-দা-গামা এক্সপ্রেস, অন্যটি পারাদীপ থেকে আসা কয়লা বোঝাই মালগাড়ি। প্রথম দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, দ্বিতীয়টিতে প্রাণহানির খবর নেই। রেলকর্তাদের ধারণা, দু’টি দুর্ঘটনাই ঘটেছে লাইনে ফাটল থাকায়।
উত্তর-মধ্য রেলের খবর, প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে এ দিন ভোর সওয়া ৪টে নাগাদ। গোয়া থেকে ছেড়ে আসা ভাস্কো-দা-গামা এক্সপ্রেস পটনা আসছিল। উত্তরপ্রদেশের মানিকপুর স্টেশনের কাছে দূরপাল্লার ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। ১৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনায় তিন জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ন’জন। তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পরের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, ওডিশার পারাদীপের কাছে। বন্দর থেকে মালপত্র বহনের জন্য ওই এলাকায় একটি শাখা লাইন রয়েছে। পূর্ব উপকূল রেল সূত্রের খবর, এ দিন দুর্ঘটনা ঘটেছে ওই লাইনের গোরখনাথ এবং রঘুনাথপুর স্টেশনের মাঝখানে। মালগাড়িটির ১৪টি কয়লা বোঝাই কামরা লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে। এই দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত না-হলেও মালপত্রের ক্ষতি হয়েছে।
ভাস্কো-দা-গামা এক্সপ্রেস বেলাইন হওয়ার খবর পেয়ে উত্তর-মধ্য রেলের কর্তারা দুর্ঘটনাস্থলে রওনা দেন। পাঠানো হয় অ্যাক্সিডেন্ট রিলিফ ভ্যান ও মেডিক্যাল রিলিফ ট্রেন। যায় বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। প্রাথমিক তদন্তের পরে অনুমান করা হচ্ছে, দু’টি ক্ষেত্রেই সম্ভবত লাইনে ফাটল থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
চলতি বছরের পাঁচ বিপত্তি
মাস কোথায় ট্রেন মৃত আহত
• জানুয়ারি অন্ধ্রপ্রদেশ হীরাকুন্দ এক্সপ্রেস ৪০ ৭০
• অগস্ট উত্তরপ্রদেশ উৎকল এক্সপ্রেস ২২ ২০০
• অগস্ট উত্তরপ্রদেশ কৈফিয়ত এক্সপ্রেস ৭০
• অগস্ট মুম্বই নাগপুর দুরন্ত এক্সপ্রেস ০ ০
• নভেম্বর উত্তরপ্রদেশ ভাস্কো-দা-গামা এক্সপ্রেস ৩ ৯
এই নিয়ে চলতি বছরে রেলে পাঁচটি বড় দুর্ঘটনা ঘটল। তার মধ্যে উত্তর-মধ্য রেলেই তিনটি। কেন বারবার উত্তর-মধ্য রেলেই দুর্ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে রেলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে। রেলকর্তাদের একটি অংশের বক্তব্য, রেলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে খামতি থেকে যাচ্ছে। রেল বোর্ড বা রেল মন্ত্রকের তরফে যতই নির্দেশ পাঠানো হোক, সেগুলো থেকে যাচ্ছে কাগজে-কলমে। নইলে বারবার এই জোনে দুর্ঘটনা ঘটবে কেন?
উত্তর-মধ্য রেলে লাইনের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রেলেরই একাংশ। তাদের বক্তব্য, লাইনের মান খারাপ বলেই তা বারবার ভেঙে যাচ্ছে। ইস্পাতের তৈরি রেললাইনের যে-সব গুণমান বিচার করে সেগুলো কেনার কথা, এখানে সেটা হচ্ছে না।
রেলকর্তারা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, আবহাওয়ার খামখেয়ালি পরিবর্তনের জন্যই লাইনে ফাটল ধরে।
তাপমাত্রার চটজলদি ওঠানামায় অনেক সময়েই লাইনের ইস্পাতের আণবিক গঠন বদলে যায়। এবং তাতেই ধরে ফাটল।
রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের বক্তব্য, এটা ঠিক যে, আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য লাইনে ফাটল ধরতে পারে। নির্মাণপর্বে এটা মাথায় রেখেই সংস্থাগুলির ইস্পাত তৈরি করার কথা। যাতে তাড়াতাড়ি লাইনে ফাটল না-ধরে। লাইন তৈরির সময়ে ভিতরে বাতাস ঢুকে পড়লেও পরে ফাটল ধরতে পারে। সে-ক্ষেত্রে লাইনের মান খারাপ বলে ধরে নেওয়া হয়। উত্তর-মধ্য রেলে ঠিক কী ঘটছে, তদন্তেই সেটা বোঝা যাবে।