আরাবল্লী পাহাড় বাঁচাতে প্রতিবাদ স্থানীয়দের। ছবি: সংগৃহীত।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিপন্ন আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণি সংরক্ষণের দাবিতে রাজস্থান এবং হরিয়ানার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে সরব হয়েছেন স্থানীয়েরা। এ বার ডাক দেওয়া হল এক দিনের প্রতীকী অনশনের। রবিবার সকালে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ঠিক এক মাসের মাথায়, হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলায় এই অনশন কর্মসূচি শুরু হবে। পরিবেশকর্মীদের পাশাপাশি অনশনে বসবেন গ্রামবাসীরাও।
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে ভিওয়ানির তোষম পাহাড়ে শুরু হবে এক দিনের প্রতীকী অনশন। উল্লেখ্য, এই তোষম পাহাড় আরাবল্লির সবচেয়ে উত্তরের অংশ। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর প্রশ্নের মুখে পড়েছে আরাবল্লির বেশির ভাগ পাহাড়ের অস্তিত্ব। দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাতের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার এলাকা জু়ড়ে বিস্তৃত প্রাচীন পাহা়ড়শ্রেণি আরাবল্লি গত ২০০ কোটি বছর ধরে উত্তর ভারতের অন্যতম ঢাল হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। থর মরুভূমি থেকে উড়ে আসা বালি এবং ধূলিকণাকে রুখে দেয় এই অনুচ্চ পাহাড়গুলি। দিল্লির বায়ুদূষণ কমাতেও সাহায্য করে। সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের ৩৭টি জেলার বহু সম্প্রদায়ের প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠ, পশুখাদ্য, ভেষজ ওষধি আসে আরাবল্লির বনভূমি থেকে।
গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১০০ মিটারের বেশি হলে তবেই সেই পাহাড়কে আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণির অংশ বলা যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নয়, বরং আশপাশের এলাকার চেয়ে ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূখণ্ডই কেবলমাত্র আরাবল্লি পাহাড় বলে গণ্য হবে— এমনটাই ছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রস্তাবিত সংজ্ঞা। তাতেই সিলমোহর দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এতদিন আরাবল্লি বলতে যে সব পাহাড়কে বোঝানো হত, তার বেশির ভাগই আর পাহাড় বলে গণ্য হবে না। ফলে সে সব এলাকায় সহজেই খননকাজ চালানো যাবে। নির্বিচারে গড়ে তোলা যাবে পর্যটনকেন্দ্রও। এই রায়ের পর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। আরাবল্লিকে বাঁচাতে সমাজমাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। গ্রামবাসী, আইনজীবী থেকে শুরু করে রাজনীতিক কিংবা পরিবেশকর্মী— অনেকেই সরব হয়েছেন।
‘পিপল ফর আরাবল্লি’ নামে এমনই এক মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা নীলম আলুওয়ালিয়ার কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে আমরা গভীর ভাবে হতাশ। এই রায় আরাবল্লির জন্য মৃত্যুদণ্ডের শামিল।’’ ‘স্ট্যান্ড উইথ নেচার’ মঞ্চের তরফে লোকেশ ভিওয়ানিও বলেন, ‘‘এই রায় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, জলের জোগান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমরা দাবি করছি, সরকার ৬৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ আরাবল্লি পাহাড়শ্রেণিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত অঞ্চল’ ঘোষণা করুক। এই এলাকায় সব ধরণের খননকাজ অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।’’