আয়নাটা দেখতে পাচ্ছি তো আমরা?

মহম্মদ আহমেদ রাদোয়ান। মার্কিন নাগরিক। পেশায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মুসলমান। মুসলমান নাম বলে আমেরিকান এয়ারলাইন্স তাঁকে অপমান করে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়। তাঁর একটা বাক্য নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন সহিষ্ণু গণতন্ত্রের ভিতকে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৮
Share:

আতঙ্কের দিনরাত। শহরে কার্ফু। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে টানা সংঘর্ষ চলছে পুলিশের। উদ্বেগে ভূস্বর্গ। শুক্রবার শ্রীনগরে। ছবি: পিটিআই।

মহম্মদ আহমেদ রাদোয়ান। মার্কিন নাগরিক। পেশায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মুসলমান। মুসলমান নাম বলে আমেরিকান এয়ারলাইন্স তাঁকে অপমান করে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়। তাঁর একটা বাক্য নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন সহিষ্ণু গণতন্ত্রের ভিতকে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি ১৩ বছর ধরে মার্কিন নাগরিক। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, আমার যাবতীয় মার্কিনত্ব আচমকাই ছিনিয়ে নেওয়া হল।’’ এই এক অমোঘ বাক্য গোটা পৃথিবীকে দাঁড় করিয়ে দিল আয়নার সামনে।

Advertisement

যেমন করেছেন শাহ ফয়জল। আইএএস পরীক্ষায় গোটা দেশে প্রথম হয়ে এখন শ্রীনগরে শিক্ষা দফতরে পোস্টেড। শুক্রবার আনন্দবাজার পত্রিকায় কাশ্মীরের এই মুহূর্তের মানস বোঝাতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের পথ উন্নয়নের, হিংস্রতার নয়। আলোচনার, সংলাপের। হুমকির নয়। না হলে উগ্র পথ কাশ্মীরকে ভারতের থেকে দূরে ঠেলে দেবে।’’

জঙ্গিবাদের মোকাবিলায় রাষ্ট্র যদি সতর্ক, সুচিন্তিত এবং আলোচনার পথ-খোলা-রাখা পন্থা না নেয়, তা হলে কী হয়, সম্প্রতি কাশ্মীর উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়া অশান্তি থেকে সেটা বুঝতে পারছে সরকার। অতএব ছররার বদলে কোন নিরীহ উপায়ে আন্দোলন মোকাবিলা করা যায়, সেই ভাবনা শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

Advertisement

মার্কিন আবহ-সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নেওয়া মহম্মদ আহমেদ রাদোয়ান একটি এয়ারলাইন্স-এর কয়েক জনের আচরণে মুহূর্তে একা হয়ে যান। হয়ে যান বিচ্ছিন্ন। বন্ধুত্বপূর্ণ উষ্ণতার অভাব তাঁকে আলাদা করে দেয় সমাজের থেকে, দেশের থেকে। অভিমানী করে তোলে।

শাহ ফয়জল এই বন্ধু্ত্বপূর্ণ উষ্ণতার আকাঙ্ক্ষাই করেছেন। কাশ্মীরের মানুষের মনে অনেক সন্দেহ, অনেক দ্বিধা কেন, এর উত্তর যদি ‘পাকিস্তানের প্ররোচণা’-র মতো একঘেয়ে বিবৃতিকেই আলমারি থেকে বার করে আনা হয় অনর্গল, যদি বন্ধুত্বপূর্ণ উষ্ণতার পথে সেই মনকে ছোঁয়ার চেষ্টা না হয়, তা হলে সমাধান কোনও দিন মিলবে না।

বন্দুক কাশ্মীরের মনকে আরও অশান্ত করবে। অভিমান, ক্ষোভ, সংশয়, দ্বিধার জন্ম দেবে। তা কি বিচ্ছিন্নতাবাদ? বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে যাতে পথ ঘুরে না যায়, সেই জন্যই আলোচনার টেবিল আনতে হবে। এই কাশ্মীরকে অচ্ছেদ্য রাখার দায় রাষ্ট্রেরই। বন্দুক নয়, হৃদয়ের আলিঙ্গনেই তা সম্ভব।

সাম্প্রতিক কাশ্মীর সেই শিক্ষা দিল। শাহ ফয়জল সেই কথাটা সরাসরিই বলেছেন। আয়নাটা দেখতে পাচ্ছি তো আমরা?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement