ভোটে অসম

হাতে ইস্তাহার, গুয়াহাটি চষছেন কংগ্রেসি দুই নারী

লড়াইয়ে দুই নারী। হাতে তলোয়ার নয়, ইস্তাহার। তলোয়ারের চেয়েও ঢের বেশি ধার তাঁদের কথায়। রাজ্যের ‘হাই প্রোফাইল’ আসনগুলির অন্যতম পূর্ব ও পশ্চিম গুয়াহাটিতে দুই বর্তমান বিধায়ককে ছাঁটাই করে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে ববিতা শর্মা এবং জুরি শর্মা বরদলৈকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০০
Share:

জুরি শর্মা বরদলৈ ও ববিতা শর্মা।—নিজস্ব চিত্র

লড়াইয়ে দুই নারী। হাতে তলোয়ার নয়, ইস্তাহার। তলোয়ারের চেয়েও ঢের বেশি ধার তাঁদের কথায়। রাজ্যের ‘হাই প্রোফাইল’ আসনগুলির অন্যতম পূর্ব ও পশ্চিম গুয়াহাটিতে দুই বর্তমান বিধায়ককে ছাঁটাই করে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে ববিতা শর্মা এবং জুরি শর্মা বরদলৈকে। টিকিট হারানোয় ক্ষোভে, দুঃখে দল ছেড়ে লড়তে নেমেছেন পশ্চিম গুয়াহাটির বিধায়ক হেমন্ত তালুকদার। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই তাঁকে বহিষ্কার করেছে। অন্য দিকে, ববিতা শর্মার কাছে টিকিট খুইয়ে মনের দুঃখে কার্যত গৃহবন্দী রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈয়ের পুত্র রবীন বরদলৈ। বিরুদ্ধে দুঁদে প্রার্থীদেরও ডরাচ্ছেন না কংগ্রেসের দুই আনকোরা সৈনিক। জোরকদমে প্রচার আর দলের পাশাপাশি নিজেদের ইস্তাহার নিয়ে লড়তে তৈরি ববিতা ও জুরি।

Advertisement

পশ্চিম গুয়াহাটির বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট, নিকাশি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ থাকলেও ধীরে ধীরে কাজ এগোচ্ছিলেন হেমন্তবাবু। কিন্তু সব ক’টি বিধানসভা অধিবেশন ও বেশ কয়েকটি সরকারি অনুষ্ঠানে নিদ্রারত হেমন্তবাবুর ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে বিজেপি তাঁর তাঁর নামকরণ করে, ‘কলির কুম্ভকর্ণ’। হেমন্তবাবু অবশ্য জানান, শারীরিক সমস্যার জন্যই এই নিদ্রারোগ। তাঁর দাবি, যদি তিনি গত পাঁচ বছর ঘুমিয়েই কাটাতেন তাহলে পশ্চিম গুয়াহাটির এত উন্নতি হত না। ‘নির্দল’ হেমন্তবাবু নিজের ইস্তাহার প্রকাশ করে জানান: সড়ক, বিদ্যুৎ সংযোগ, সত্রের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি, জলাভূমির উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, মহিলাদের বিকাশ ও কৃত্রিম বন্যা রোধের অসমাপ্ত কাজগুলি শেষ করাই আপাতত তাঁর লক্ষ্য হবে। তালুকদারের দাবি, ‘‘এত বছর ধরে ভোট দেওয়া মানুষরা আমার সঙ্গেই আছেন। তাঁদের চাপেই আমি নির্দল হয়ে লড়ছি।’’ তালুকদারের মতে, জুরি শর্মার সঙ্গে তাঁর কোনও তুলনাই চলে না। তাঁর লড়াই শুধু অগপর রামেন্দ্রনারায়ণ কলিতার সঙ্গে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘জুরিদেবীর প্রচার-সঙ্গী কংগ্রেস কর্মীরা সকলেই বহিরাগত।’’

জুরিদেবী অবশ্য হেমন্তবাবুর দাবি উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘উন্নয়নের কাজ করতে না পারার জন্যেই দল হেমন্তবাবুকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।’’ তরুণ গগৈ, ভুবনেশ্বর কলিতাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জুরিদেবীকে খাদি ও গ্রামোদ্যগ দফতরের চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়েছে। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। দলীয় ইস্তাহারের বাইরে নিজের ‘স্বতন্ত্র ইস্তাহার’ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘দু’দফায় বিধায়ক হয়েও পশ্চিম গুয়াহাটিতে পরিকল্পনামাফিক সড়ক, কালভার্ট, নিকাশি কিছুই করতে পারেননি তালুকদার। বিষ্ণুপুর, ভাস্করনগরের পানীয়জল প্রকল্পের কাজ হয়নি।’’ জুরি এলাকার একাধিক স্থানে মৎসচাষ করার পরিকল্পনাও করেছেন। দীপর বিলের আশপাশে থাকা বেকারদের কর্মসংস্থান দেওয়া ও সেখানে গ্রাম-পর্যটন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে জুরিদেবীর। হেমন্ত তালুকদার নন, তিনিও প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে অগপর রামেন্দ্রনারায়ণকেই চিহ্নিত করেছেন।

Advertisement

কিন্তু বিজেপি-অগপ জোটের প্রার্থী, অগপ নেতা রামেন্দ্রনারায়ণ এলাকার উন্নয়নে বিস্তর প্রতিশ্রুতি দিলেও কালাপাহাড়, ভাস্করনগর, লালগণেশ এলাকার বাঙালি ভোটারদের নিয়েই তাঁর চিন্তা। এর আগে ২০০৬ সালে হেমন্তবাবুকে হারিয়ে তিনি বিধায়ক হলেও, পশ্চিম গুয়াহাটির ওই সব এলাকার প্রায় ২২ হাজার বাঙালি ভোটার অগপ-বিরোধী বলেই পরিচিত। বাঙালি-বিরোধী নেতা হিসেবে কলিতার পরিচিত। ফলে এই বিশ-বাইশ হাজার ভোট তাঁর বিরুদ্ধে যেতে পারে বলেই বিজেপির গোপন আশঙ্কা। এমনিতে ওই এলাকার বাঙালিরা বরাবরই বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক। কিন্তু নির্বাচনী সমঝোতার ফলে অগপকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বিজেপি। এলাকার বাঙালি ভোটারদের অনেকেই বলছেন, তাঁরা এবার ‘নোটা’ বিকল্পকেই বেছে নিতে পারেন।

অন্য দিকে, পূর্ব গুয়াহাটিতে সরাসারি লড়াই অভিনেত্রী বনাম আইনজীবীর। ববিতা শর্মা ও প্রদেশ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যের লড়াই সকলের মতে সমানে-সমানে টক্কর। বনেদি পরিবারের অভিনেত্রী, পরিচালিকা ও ব্যবসায়ী ববিতাও গগৈ ঘনিষ্ঠ নেত্রী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসম রাজ্য ফিল্ম ফিনান্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। অন্য দিকে সিদ্ধার্থবাবু দুঁদে আইনজীবী হওয়ার পাশাপাশি এলাকাতেও দীর্ঘদিনের পরিচিত বাসিন্দা। অবশ্য প্রদেশ বিজেপির সভাপতি হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে দলেই অনেক অসন্তোষ তৈরি হয়। ভোটের আগে তাঁকে সরিয়ে দিল্লি থেকে দলের দায়িত্ব দিয়ে সর্বানন্দকে পাঠানো হয়।

সিদ্ধার্থবাবুকে টক্কর দিতে ববিতাদেবীও নিজের পৃথক ইস্তাহার তৈরি করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে: ভাষা-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের উন্নয়ন, রাস্তাঘাট সারানো, কৃত্রিম বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে গুরুত্ব দেবেন। হাতি-মানুষের সংঘাত থামাতে, ভূমিহীনদের জমির পাট্টা দিতে, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে কাজ করবেন তিনি। জোর দেওয়া হবে স্কুল তৈরি, মহিলা ও বয়স্ক শিক্ষা এবং যুব কল্যাণে। আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলে গুয়াহাটিকে আরও নাগরিক-বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। সিদ্ধার্থবাবু অবশ্য ভোটপ্রচারে বলছেন, ‘‘টাকা নয়, গুয়াহাটিবাসীর সমস্যা সমাধানে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতা।’’ একবার তাঁকে সুযোগ দিলে পরিবর্তন চোখে আঙুল দিয়ে নাকি দেখিয়ে দেবেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই জানেন, সমস্যার শেষ না দেখে আমি ছাড়ি না। তাই বিধানসভায় ঘুমোতে বা চেহারা দেখাতে যাব না আমি। উন্নয়ন চাইলে, বিধায়ককে দিয়ে কাজ করাতে চাইলে, আমাকেই বেছে নেবেন পূর্ব গুয়াহাটির মানুষ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement