আদর: হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে রোহিত ভেমুলার আবক্ষ মূর্তির সামনে তাঁর মা রাধিকা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
দু’জনেই ছাত্র। এক জন মানসিক নিপীড়নে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল তিন বছর আগে। আর এক জন নিখোঁজ প্রায় তিন বছর। সেই দুই ছাত্রের মায়েদের পথ আজ মিশে গেল একসঙ্গে।
তিন বছর আগে উচ্চবর্ণের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আত্মহত্যা করেছিলেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি-র ছাত্র দলিত সমাজের রোহিত ভেমুলা। দেশদ্রোহের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রোহিত-সহ পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ৪ পড়ুয়াকে সাসপেন্ড ও হোস্টেল প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪ মাস হস্টেলের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থাকার পরে আত্মহত্যা করেন রোহিত।
তার তিন বছরের মাথায় আজ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ, ছেলের আবক্ষ মূর্তিকে ছুঁতে পারছেন না মা রাধিকা, তখন শক্ত হাতে তাঁকে আগলে রেখেছেন আর এক মা। তিনি নাজিব আহমেদের মা ফতিমা। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের বায়ো টেকনোলজির প্রথম বর্ষের ছাত্র নাজিবও নিখোঁজ তিন বছর ধরে। ঘটনাচক্রে দু’ই ছাত্রের হতভাগ্য পরিণতির পিছনে অভিযোগের তির সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র বিরুদ্ধে। রোহিতের বিরুদ্ধে যেমন দেশদ্রোহের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যত এক ঘরে করে দিয়েছিল এবিভিপি, তেমনই নিখোঁজ হওয়ার রাতেও নাজিবকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে জেএনইউয়ের এবিভিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। তার পর থেকেই নিখোঁজ নাজিব।
স্বভাবতই আজ এবিভিপি ও বর্ণহিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় সরব হন রাধিকা ভেমুলা। পাশে তখন দাঁড়িয়ে ফতিমা। রাধিকা বলেন, ‘‘সমস্ত সাম্প্রদায়িক হিন্দু শক্তির বিরুদ্ধে আগামী দিনে লড়াই জারি থাকবে।’’
এই শক্তির বিরুদ্ধে প্রচারে নামারও পরিকল্পনা নিয়েছেন রাধিকা। রাধিকা বলেন, ‘‘নাজিবের নিখোঁজের পিছনে যারা রয়েছে তারাই রোহিতের মৃত্যুর জন্য দায়ী।’’
গত দু’বারের মতো এ বছর রোহিতের মৃত্যুদিনকে ‘রোহিত শাহাদত দিন’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় অম্বেডকর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এএসএ)। রোহিতের সঙ্গেই তিন বছর আগে একই অপরাধে সাসপেন্ড হয়েছিলেন এএসএ-র তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডি প্রশান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে এসএফআই-তে যোগদান করলেও, পরে এএসএ-তে যোগ দেয় রোহিত। যে কোনও বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা ছিল রোহিতের মস্ত গুণ। তার ফলে সহজ কথায় যে কোনও কঠিন বিষয়কে ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাতে পারতো রোহিত।’’