(বাঁ দিকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতের বিষয়ে পাকিস্তানের যাবতীয় অভিযোগের জবাব দিল নয়াদিল্লি। তাজিকিস্তানে গত তিন দিন ধরে হিমবাহ সংরক্ষণ বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলছে। ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশের প্রতিনিধিই আছেন সেখানে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ ওই সম্মেলন থেকে শুক্রবার ভারতকে আক্রমণ করেন। দাবি করেন, ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বেআইনি। পাকিস্তান তা মেনে নেবে না। হুঁশিয়ারির সুরে শাহবাজ় বলেছিলেন, ভারতকে ‘লাল দাগ’ পেরোতে দেবেন না। সেই সম্মেলন থেকেই পাকিস্তানকে জবাব দিল ভারত। নয়াদিল্লির তরফে তাজিকিস্তানের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিংহ। শনিবার তিনি পাকিস্তানকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন। জানিয়েছেন, সিন্ধু চুক্তি কার্যকর করতে পাকিস্তানই বাধা দিচ্ছে।
ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী চতুর্দেশীয় সফর ঘোষণা করেছিলেন। সংঘাতের সময়ে যে সমস্ত ‘বন্ধু’ দেশ পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাদের ধন্যবাদ জানাতে ওই সফরের আয়োজন করা হয়। চারটি দেশের তালিকায় ছিল তাজিকিস্তানও। সেখানেই আয়োজিত হিমবাহ সংরক্ষণ সম্মেলন থেকে শুক্রবার পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে, তা একতরফা এবং বেআইনি। এই চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জল বণ্টিত হয়। এ ভাবে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য লক্ষ লক্ষ জীবন বাজি রাখা উচিত নয়। পাকিস্তান এটা মেনে নেবে না। আমরা ভারতকে লাল দাগ অতিক্রম করতে দেব না।’’ এই চুক্তি স্থগিত করে ভারত জলকে ‘অস্ত্র’ হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে বলেও দাবি করেছিলেন শাহবাজ়। শনিবার তার জবাব দিতে গিয়ে ভারতের মন্ত্রী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের অবিরত সীমান্ত-সন্ত্রাস সিন্ধু চুক্তির বিধানগুলি কার্যকর করতে বাধা দিচ্ছে। পাকিস্তান নিজেই আসলে চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ওদের ভারতকে দোষারোপ করা বন্ধ করা উচিত।’’
হিমবাহ সংক্রান্ত সম্মেলনে কেন সিন্ধু চুক্তির প্রসঙ্গ তোলা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কীর্তি। অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই প্রসঙ্গ তুলে সুযোগের অপব্যবহার করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কীর্তি বলেন, ‘‘এই ফোরামের অপব্যবহার করছে পাকিস্তান। ফোরামের সঙ্গে যোগ নেই, এমন বিষয়ের উল্লেখ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই ধরনের প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করছি।’’ ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সিন্ধু এবং তার পাঁচ উপনদীর জল দুই দেশের মধ্যে কী ভাবে বণ্টিত হবে, তা ঠিক করা হয় এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী। ভারতের মন্ত্রী জানিয়েছেন, সিন্ধু চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। তাই ওই চুক্তির শর্তগুলি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছিল ভারত। তার পর থেকে পাকিস্তান বার বার দাবি করে আসছে, ওই নদীগুলির জলের উপরে তাদের দেশের ২৪ কোটি মানুষের জীবন নির্ভর করে আছে। তাই ভারত এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে ইসলামাবাদ। তাজিকিস্তানের ওই সম্মেলনে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৮০টি সদস্যরাষ্ট্রের আড়াই হাজারের বেশি প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। সকলের সামনেই এ বার পাকিস্তানের অভিযোগের জবাব দিলেন ভারতের প্রতিনিধি।