মস্কোয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।
রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনায় ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আমেরিকা যে যুক্তি দিয়েছে, তাতে হতবাক নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার মস্কো থেকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সে কথা জানিয়েছেন। রুশ বিদেশমন্ত্রী সেরগেই লাভরভের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন তিনি। তার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে আমেরিকার শুল্ক সংক্রান্ত হুমকি নিয়ে জয়শঙ্করকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তিতে তিনি অবাক। তার তিনটি কারণও দেখিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সেই শুল্কহার কার্যকর হয়ে গিয়েছে। পরে তিনি জানান, রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনার কারণে ‘জরিমানা’ হিসাবে ভারতকে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। ফলে ভারতীয় পণ্য আমেরিকায় রফতানি করতে হলে দিতে হবে ৫০ শতাংশ শুল্ক। ২৭ অগস্ট থেকে নতুন হার কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু রাশিয়া থেকে তেল তো একা ভারত আমদানি করে না। চিন-সহ একাধিক দেশ সেই তালিকায় আছে। অন্য কোনও দেশকেই এই কারণে ‘জরিমানা’ করেননি ট্রাম্প। কেন শুধু ভারতকেই বেছে নেওয়া হল? প্রশ্ন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সরাসরি আমেরিকার শুল্কের কথা তোলেননি জয়শঙ্কর। তিনটি কারণ দেখিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা নই, সবচেয়ে বড় ক্রেতা চিন। আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি এলএনজি (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করি না। আমি যত দূর জানি, সেটা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২২ সালের পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক অগ্রগতি আমাদের হয়নি, হয়েছে দক্ষিণের কিছু দেশের।’’ জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকানেরা বলে চলেছেন, বিশ্বের জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল করতে আমাদের যা করার করতে হবে। ঘটনাচক্রে, আমরা কিন্তু আমেরিকার কাছ থেকেও তেল কিনে থাকি এবং সেই পরিমাণ আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সত্যি কথা বলতে, এ নিয়ে যে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, আমরা তাতে হতবাক।’’
কেন ভারতের উপর ৫০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক চাপানো হল, কেন চিনের উপর কোনও শুল্ক এখনও চাপাননি ট্রাম্প? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অদ্ভুত যুক্তি দিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। জানিয়েছেন, চিনের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হলে সারা বিশ্বের উপর তার প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষত ভুগতে হতে পারে ইউরোপকে। কারণ, রাশিয়া থেকে যে তেল চিনে যাচ্ছে, তা পরিশোধন করে অধিকাংশই ইউরোপের বাজারে বিক্রি করছে বেজিং। যেহেতু চিনের মাধ্যমে ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার তেল আসে, তাই চিনের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করলে ইউরোপের দেশগুলিতে জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে। এখনই তাই চিনের উপর কোনও শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে না। জয়শঙ্কর উল্লেখ করেননি, তবে তিনি আমেরিকার এই যুক্তির কথাই বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এতেই ‘হতবাক’ নয়াদিল্লি।