রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনার জন্য ভারতকে যে ‘জরিমানা’ করা হয়েছে, তা চিনের ক্ষেত্রে কেন প্রযোজ্য হচ্ছে না? রবিবার তার উত্তর দিলেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। হিসাব কষেই ভারতের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। চিনকে আপাতত বাদ রাখা হয়েছে। রুবিয়োর যুক্তি, চিনের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হলে সারা বিশ্বের উপর তার প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষত ভুগতে হতে পারে ইউরোপকে।
রবিবার আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ফক্স বিজ়নেসকে একটি সাক্ষাৎকার দেন রুবিয়ো। সেখানে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য আর কোনও দেশের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হয়। রাশিয়ার খনিজ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চিন। তাদের ছেড়ে কেন ভারতকে ‘জরিমানা’ করা হল? রুবিয়ো বলেন, ‘‘রাশিয়া থেকে যে তেল চিনে যাচ্ছে, তা পরিশোধন করে অধিকাংশই ইউরোপের বাজারে বিক্রি করছে চিন। ইউরোপ প্রাকৃতিক গ্যাসও কিনছে। অনেক দেশ বিষয়টি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইউরোপেরও এ ক্ষেত্রে অনেক কিছু করার রয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
রুবিয়োর বক্তব্য, যেহেতু চিনের মাধ্যমে ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার তেল আসে, তাই চিনের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করলে তার প্রভাব পড়বে ইউরোপেও। সেই দেশগুলিতে জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে। ফলে চিনের শুল্কের ফল ভুগতে হবে ইউরোপের অনেক দেশকে। ইতিমধ্যে ইউরোপ তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক আমেরিকা। রুবিয়ো বলেন, ‘‘যদি ধরে নিই রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য চিনের উপর শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, চিন তো শুধু তেলটাকে পরিশোধন করে। সেই তেল বিশ্ববাজারে বিক্রি করা হয়। ফলে শুল্ক আরোপ করা হলে যে দেশই ওই তেল কিনবে, তাকে আগের চেয়ে বেশি দাম দিতে হবে। আমাদের বিকল্প খুঁজতে হবে।’’
মার্কিন সেনেটে চিন এবং ভারতের পণ্যে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব উঠেছিল। ইউরোপ তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, জানিয়েছেন রুবিয়ো। তাঁর কথায়, ‘‘সংবাদমাধ্যমে এটা বলা হয়নি। তবে আমরা শুনেছি। ইউরোপের কোনও কোনও দেশ এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’’
ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে আরও ২৫ শতাংশ শুল্কের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশ। আগামী ২৭ অগস্ট থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেছে নয়াদিল্লি। অন্য অনেক দেশ রাশিয়ার তেল আমদানি করে। কেন শুধু ভারতকেই অতিরিক্ত শুল্কের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে, প্রশ্ন তোলা হয়। এই মুহূর্তে ভারত যত তেল আমদানি করে, তার ৩৫ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমি বিধিনিষেধের মুখে রাশিয়া তেলের দাম অনেক কমিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকে সস্তায় তাদের তেল আমদানি করে ভারত। কিন্তু আমেরিকার বক্তব্য, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনার ফলে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছেন ভ্লাদিমির পুতিনেরা। ভারতের অবস্থান এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট— আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই বাণিজ্যনীতি নির্ধারিত হবে।