আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোয় (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) অন্তর্ভুক্তি ছিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির অন্যতম দাবি। তাতে এখনও রাজি হয়নি রাশিয়া। তবে ইউক্রেন নিয়ে একটি শর্ত মেনে নিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমনটাই জানালেন আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উইটকফও। মনে করা হচ্ছে, পুতিনের সম্মতিতেই একপ্রকার ‘জয়’ দেখছে দেখছে আমেরিকা। সেই কারণেই বৈঠককে এত ‘ফলপ্রসূ’ বলছেন ট্রাম্প। তবে সবটাই নির্ভর করছে সোমবারের বৈঠকের উপর। জ়েলেনস্কি এবং ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প।
কী শর্ত?
রাশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষবিরতিতে ইউক্রেনের প্রধান দাবি নিরাপত্তা সংক্রান্ত। নেটো-র নিয়মাবলিতে পাঁচ নম্বর ধারা বা ‘আর্টিকেল ৫’-এ যে নিরাপত্তার কথা বলা রয়েছে, ইউক্রেনের জন্য পুতিন সেই নিরাপত্তায় সম্মতি দিয়েছেন বলে দাবি উইটকফের। তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘আমরা একটি বিষয় জিতে আনতে পেরেছি। আমেরিকা ‘আর্টিকেল ৫’-এর মতো নিরাপত্তা ইউক্রেনকে দিতে পারবে। ইউক্রেন মূলত এই কারণেই নেটোয় ঢুকতে চায়। এটা অন্যতম প্রধান কারণ।’’ রাশিয়াকে এই প্রথম এই ধরনের দাবিকে মান্যতা দিতে দেখা গেল, দাবি উইটকফের।
আরও পড়ুন:
কী আছে ‘আর্টিকেল ৫’-এ?
নেটো-র ‘আর্টিকেল ৫’ অনুযায়ী, এই জোটের কোনও সদস্য রাষ্ট্রের উপর যদি অন্য কেউ আক্রমণ করে, তবে জোটের বাকি ৩২ সদস্যও সেটাকে নিজেদের উপর আক্রমণ হিসাবে দেখবে এবং তা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। ইউক্রেন নেটো-র সদস্য দেশ না হলেও এই ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যদি পায়, তবে জ়েলেনস্কি সংঘর্ষবিরতি মেনে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এর পর ইউক্রেনের উপর আর কোনও আক্রমণ হলে আমেরিকা-সহ নেটো-র ৩২ সদস্য রাষ্ট্রই সর্বশক্তি দিয়ে তার মোকাবিলা করতে পারবে। যদিও ইউক্রেনের জন্য নেটো-র সম্পূর্ণ সদস্যপদ মেনে নেননি পুতিন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেইয়েন রবিবার বলেছেন, ‘‘আমরা ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তুত।’’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এটা একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। ইউক্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে আমেরিকা প্রস্তুত। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় শীঘ্রই নিরাপত্তার এই নিশ্চয়তা বাস্তবায়িত হবে। স্থলে, আকাশে এবং সমুদ্রে যা আমাদের রক্ষা করবে। ইউরোপের হস্তক্ষেপে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।’’
আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন ট্রাম্প। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত সেখানে হয়নি। তবে ট্রাম্প এবং পুতিন উভয়েই দাবি করেন, বৈঠক ‘ইতিবাচক’ এবং ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে। ট্রাম্প জানান, এ বার বাকিটা জ়েলেনস্কির উপর নির্ভর করছে। তার পরেই সোমবার জ়েলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। থাকবেন ইউরোপের নেতারাও।