Mock Drill in India

দেশ জুড়ে সাজ সাজ রব! যুদ্ধ পরিস্থিতি এলে কী করবেন, কী কী মজুত রাখবেন, শেখাতে বুধবার থেকে অসামরিক মহড়া

১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় শেষ বার ভারতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য এই ধরনের মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল। তার পরে বুধবার আবার সেই মহড়া হবে দেশ জুড়ে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ ২১:৩২
Share:

দেশ জুড়ে অসামরিক মহড়ার প্রস্তুতি। ছবি: পিটিআই। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া পদক্ষেপ করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউই ‘সরাসরি যুদ্ধ’ ঘোষণা করেনি। তবে দুই দেশের টানাপড়েনের আবহে ভারতের রাজ্যগুলিতে হবে অসামরিক মহড়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আপৎকালীন বা যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য সাধারণ মানুষকে প্রস্তুত করতেই এই মহড়ার আয়োজন করা হচ্ছে। তবে বুধবার থেকে শুরু হওয়া মহড়ায় কী হবে, কোন কোন বিষয়ে জোর দেওয়া হবে— তা নিয়ে কৌতূহল নানা মহলে। তবে মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই মহড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্কুলেও সেই ছবি দেখা গিয়েছে।

Advertisement

১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় শেষ বার ভারতে সাধারণ নাগরিকদের জন্য এই ধরনের মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল। তার পরে বুধবার আবার সেই মহড়ারই আয়োজন হবে দেশ জুড়ে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২০১০ সালের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দেশের ২৭টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ২৪৪টি ‘অসামরিক প্রতিরক্ষা জেলা’ বা ‘সিভিল ডিফেন্স ডিস্ট্রিক্ট’ রয়েছে। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি জেলাও। দেশের সব রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, মূলত বিমান হামলা হলে কী ধরনের পদক্ষেপ করতে হবে তা শেখানো হবে সাধারণ মানুষকে। তবে কারা এই মহড়া দেওয়াবেন, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট বার্তা মেলেনি। কোথাও বলা হচ্ছে পুলিশ থাকবে, কোথাও আবার সেনা, আবার কোথাও কোথাও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীরা শেখাতে পারেন। তবে এটা স্পষ্ট, নানা জায়গা এই মহড়া নানা ভাবে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

স্বরাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক

Advertisement

এই মহড়া নিয়েই রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্রসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন। সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে ছিলেন অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্তারাও। বুধবারের মহড়া নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়, সেই বৈঠকে। কী কী করণীয়, তা নিয়েই আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছে বলেই সূত্রে খবর।

বাংলায় ‘মক-ড্রিল’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে মঙ্গলবার উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মোকাবিলা বাহিনীর ডিজি-সহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব রাজেশ সিংহ এবং সিভিল ডিফেন্সের ডিজি জগমোহন। কেন্দ্রের তরফ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ—যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে উদ্ধারকাজ, যোগাযোগ এবং পরিকাঠামোগত প্রস্তুতি কতটা কার্যকর, তা ঝালিয়ে দেখতেই এই মহড়ার আয়োজন করা হচ্ছে।

রাজ্য প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, সাধারণ মানুষের সরাসরি এতে অংশগ্রহণ না থাকলেও, জরুরি পরিষেবাগুলির প্রস্তুতি পরীক্ষা করাই মহড়ার মূল লক্ষ্য। অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, দমকল, হাসপাতালের বেড সংখ্যা, উদ্ধার সামগ্রী—সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের হাতে এখন মাত্র সাত দিন। এই সময়ের মধ্যে পরিকাঠামোগত খামতি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে হবে। তবে কিছু সূত্রের দাবি, সাধারণ মানুষও এই মহড়ায় যোগ দেবেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মহড়ায় অংশ নেবেন জেলাশাসক-সহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক, নাগরির সুরক্ষা কর্মী, হোমগার্ডেরা। এ ছাড়াও মহড়ায় অংশ নিতে বলা হয়েছে এনসিসি ক্যাডেট, নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের সদস্য এবং স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের।

তবে কোথায় কোথায় এই মহড়া হবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব রাজ্যের উপরই ছেড়েছে কেন্দ্র। বাংলার প্রতিটি জেলায় ২০ থেকে ২৫টি সাইরেন পুনঃসচল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র কলকাতাতেই রয়েছে ৯৫টি সাইরেন, যার অনেকগুলোই অকেজো ছিল। সেগুলি দ্রুত সারানোর কাজ চলছে। কলকাতার লা মার্টিনিয়ার মতো স্কুলে এই মহড়া হওয়ার কথা রয়েছে।

মহড়ায় নজর কোন কোন বিষয়ে

বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা, নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে সাধারণ মানুষ, বিশেষত পড়ুয়াদের ভূমিকা কী হবে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে কী করণীয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে কী ভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানো হবে— সেই সব বিষয়েই জোর দেওয়া হবে বুধবরের মহড়ায়। এক সূত্রের খবর, মহড়ায় আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কী কী মজুত রাখবেন সাধারণ মানুষেরা, তার ধারণাও দেওয়া হবে। বাড়িতে টর্চ, মোমবাতি বা মেডিক্যাল সরঞ্জাম সংগ্রহ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে মহড়ায়।

শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধপরিস্থিতিতে মোবাইল বা ডিজিটাল লেনদেন সম্ভব না-ও হতে পারে! সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বাড়িতে পর্য়াপ্ত পরিমাণ নগদ রাখার পরামর্শ দেওয়া হবে সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি, ভারতীয় বিমান বাহিনীর সঙ্গে হটলাইন বা রেডিয়ো-যোগাযোগের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

মহড়া আবহে শিলিগুড়িতে নামল সেনা কপ্টার

শিলিগুড়ির বাইপাস সংলগ্ন জাবরাভিটা এলাকায় মঙ্গলবার জরুরি অবতরণ সেনার হেলিকপ্টারের। প্রাথমিক সুত্রে খবর, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই অবতরণ। সেবক আর্মি স্টেশন থেকে আধিকারিক-সহ অন্যান্য কর্মীরা এসে যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে তোলার কাজ করেন। তবে অসামরিক মহড়ার আবহে সেনা কপ্টারের অবতরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে সেনার হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণ। —নিজস্ব চিত্র।

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর শুধু জঙ্গি নয়, যারা সন্ত্রাসবাদের মদত দেয়, তাদেরও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পহেলগাঁওয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব কড়া ভাবেই দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও। পহেলগাঁওয়ের হত্যালীলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তবে পাকিস্তান প্রথম থেকেই ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। তাদের দাবি, পহেলগাঁও কাণ্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগ নেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement