ক্রমে ক্রমে নয়, বার্তা রটে গেল অসম্ভব দ্রুত। মূলত, টুইটারে। ফোনে ও অন্য ভাবেও। ‘হোয়াট্সঅ্যাপ চলছে না।’ ভারতে শুধু নয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হল, আমেরিকা-এশিয়া-সহ গোটা বিশ্বেই হঠাৎ কোমায় চলে গিয়েছে যোগাযোগের জনপ্রিয় এই মাধ্যমটি।
ভারতে অনেকে সমস্যার কথা বলছিলেন বেলা ১০টা থেকেই। দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ দেখা যায়, লেখা-ছবি-ভিডিও, কোনও কিছুই যাচ্ছে না। আসছেও না। সংবাদমাধ্যমে বলা শুরু হয়, ‘আউটেজ’। গোদা বাংলায় উপচে গিয়েছে এই অ্যাপের তথ্য রাখার ভাণ্ডার। কেউ বলতে থাকে, ‘ক্র্যাশ’ করেছে কিংবা ‘ডাউন’ হয়ে গিয়েছে সার্ভার। মোটামুটি আধ ঘণ্টা, কোথাও মিনিট ৪৫ পরে ফের চালু হয় পরিষেবা। হোয়াট্সঅ্যাপেই ফের লোকজন পাঠাতে শুরু করেন স্বস্তির বার্তা। কারও কাছে এই সময়টুকু ছিল দমবন্ধ করা। কেউ লেখেন, মনে হচ্ছিল যেন সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। যদিও সন্ধেতেও পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি বলে কেউ কেউ দাবি করেছেন।
গোটা বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যবহার করেন সাইবার-যোগাযোগের এই অ্যাপ। ভারতই এর সবচেয়ে বড় বাজার। এ দেশে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০ কোটির বেশি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফের হোয়াট্সঅ্যাপের দুনিয়ায় ফিরতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও প্রশ্ন উঠছে, মানুষের ব্যক্তিপরিসরের সব তথ্য ‘হ্যাক’ হয়ে যায়নি তো? কে দেবে জবাব! আজ অন্তত মুখ খোলেনি কেউই। গ্রাহকদের সমস্যার কথা জানার পরে হোয়াট্সঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিলেও বিপত্তির কারণ নিয়ে কারণ মুখে কুলুপ তাঁদের। এমনকী, এটির মালিক যে সংস্থা, সেই মার্ক জুকেরবার্গের ফেসবুকের তরফেও আজ রাত পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানান, তাঁদের সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
ঠিক কী সমস্যা হয়েছিল? অভিযোগ, চ্যাট বক্সে মেসেজ পাঠাতে গেলেই দেখাচ্ছিল, যোগাযোগ করা হচ্ছে (কানেক্টিং)। কিন্তু তা আর হয়ে উঠছিল না। ফলে নতুন বার্তা পাঠানো বা পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অ্যাপটি বন্ধ করে ফের চালু করলে মুহূর্তের জন্য চ্যাট কানেক্ট হলেও, কিছু সময় পরেই যে কে সেই।
ব্যবহারকারীদের অনেকে জানান, তারা হোয়াট্সঅ্যাপে কোনও কিছু ডিলিট বা প্রোফাইল ছবি আপডেট করতে পারছিলেন না। সমস্যা হচ্ছিল প্রাইভেসি সেটিংস আপডেটে করতেও। হোয়াট্সঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে ব্রিটেনের কয়েক হাজার ব্যবহারকারী অভিযোগ দায়ের করেন অল্প সময়ের মধ্যেই। সেখানে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শুরু হয় সমস্যা। অভিযোগ জমা পড়তে থাকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইতালি, সৌদি আরব, ফিলিপিন্স, জার্মানি এবং আমেরিকা থেকেও। সূত্রের খবর, ৫১% গ্রাহক জানান, কানেকশনের সমস্যার কথা, ২৯% বলেন মেসেজ ও চ্যাটের সমস্যার কথা। লগ-ইন করতে পারেননি ১৯% গ্রাহক।
চলতি বছরে এই নিয়ে তিন বার থমকাল হোয়াট্সঅ্যাপের পরিষেবা। এর আগে গত মে মাসে ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, জার্মানি, বেলজিয়াম থেকে মালয়েশিয়ার মতো বিশ্বের অনেকগুলি দেশে এই অ্যাপ বেশ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এর পরে ফের সমস্যা হয় গত সেপ্টেম্বরে।