নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
‘বিশ সাল বাদ’ বিহারের স্বরাষ্ট্র দফতর ছাড়তে হল মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের। মাঝের কয়েক মাস বাদ দিলে ২০০৫ সাল থেকে একটানা বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে রয়েছেন নীতীশই। কিন্তু প্রবীণ এই জেডিইউ নেতা যে জোটেই থাকুন না কেন, স্বরাষ্ট্র দফতর বরাবর তাঁর হাতেই থেকেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিহার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীদের দফতর বণ্টন করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিহারের স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব পাচ্ছেন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধরি।
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের হাতেও অবশ্য একাধিক দফতর থাকছে। তিনি সামলাবেন সাধারণ প্রশাসন, মন্ত্রিসভা সচিবালয় এবং নজরদারি দফতরের দায়িত্ব। এর পাশাপাশি কোনও দফতর মন্ত্রীবিহীন থাকলে, তার দায়িত্বও সামলাবেন নীতীশ। আরজেডি আমলের ‘জঙ্গলরাজ’ হটিয়ে বিহারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুস্থিত করার কৃতিত্ব দাবি করেন নীতীশ। দুই দশক পরেও নীতীশের ভোটে জেতার অন্যতম হাতিয়ার এই ‘সুশাসনবাবু’ ভাবমূর্তিই। কিন্তু খাতায়কলমে মন্ত্রিসভার প্রধান সদস্য হলেও নীতীশের হাতে সেই স্বরাষ্ট্র দফতরই আর থাকছে না।
সাধারণত দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রীদের হাতেই স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব থাকে। পশ্চিমবঙ্গও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাম আমলে জ্যোতি বসু কিংবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়েও এই অলিখিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। অনেকেই মনে করেন, স্বরাষ্ট্র দফতর নিজেদের হাতে রেখে মুখ্যমন্ত্রীরা রাজ্য প্রশাসন নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব রাখতে চান। সেই অর্থে বিহারে এই কর্তৃত্ব নীতীশের হাতে থাকছে না। এই ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। অনেকের আবার মত বিহার প্রশাসনে এ বার বিজেপির প্রভাব বাড়বে। বিভিন্ন সংবাদসংস্থা সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল যে, বিহারের শাসকজোট এনডিএ-র বৃহত্তম শরিক (প্রাপ্ত আসনের নিরিখে) বিজেপি স্বরাষ্ট্র দফতরের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে। এই দফতর নিয়ে নীতীশের দল জেডিইউ-এর সঙ্গে তাদের দর কষাকষি চলছে বলেও শোনা গিয়েছিল। শেষমেশ বিহারের স্বরাষ্ট্র দফতর নিজেদের হাতেই রাখল বিজেপি।
বিহারের আর এক উপমুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির বিজয়কুমার সিন্হা পেয়েছেন রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার, খনি ও ভূতত্ত্ব দফতরের দায়িত্ব। বিজেপির মঙ্গল পাণ্ডে জোড়া দায়িত্ব সামলাবেন। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আইন দফতরের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। প্রাক্তন আরজেডি নেতা, অধুনা বিজেপি বিধায়ক রামকৃপাল যাদবকে কৃষিমন্ত্রী করা হচ্ছে। আর এক বিজেপি বিধায়ক দিলীপ জয়সওয়াল পাচ্ছেন বাণিজ্য দফতরের দায়িত্ব।
স্বরাষ্ট্র দফতর হারালেও অর্থ দফতর নীতীশের দলের হাতে থাকছে। বিহারের নতুন অর্থমন্ত্রী জেডিইউ বিধায়ক বিজেন্দ্রপ্রসাদ যাদব। তা ছাড়াও শক্তি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, খাদ্য ও ক্রেতাসুরক্ষা দফতরের দায়িত্ব পাচ্ছেন তিনি। নীতীশ-ঘনিষ্ঠ জেডিইউ বিধায়ক বিজয় চৌধরি আবাসন, জলসম্পদ এবং পরিষদীয় দফতরের দায়িত্ব সামলাবেন। গ্রামোন্নয়ন এবং পূর্ত দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেডিইউ-র শ্রোয়ান কুমারকে। গ্রামোন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব পাচ্ছেন জেডিইউ-এর অশোক চৌধরি।
কমনওয়েল্থ গেমসে সোনাজয়ী শুটার তথা জামুই কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক শ্রেয়সী সিংহ গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দ্বিগ্বিজয় সিংহের কন্যা শ্রেয়সী বিহারের ক্রীড়া এবং তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের দায়িত্ব পাচ্ছেন। এনডিএ-র শরিক দল আরএলএম-এর তরফে উপেন্দ্র কুশওয়াহার পুত্র দীপক প্রকাশ পঞ্চায়েতি রাজ দফতরের দায়িত্ব পেয়েছেন। আর এক শরিক দল হাম (এস)-এর তরফে জিতনরাম মাঝিঁর পুত্র সন্তোষ সুমনকে ক্ষুদ্র জলসম্পদ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।