মুখ্যমন্ত্রীর আসনে কে, সরগরম বিহার

মাথায় উঠেছে সাবেক জনতা পরিবারের মিলন। আপাতত, কে হবেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী?—এই প্রশ্নেই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে পরিবারের দুই সদস্য জেডিইউ ও আরজেডি। নীতীশ কুমার চাইছেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেই নির্বাচনে লড়তে নামুক সম্মিলিত জনতা দল। কিন্তু লালুপ্রসাদ চাইছেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আর এখানেই শেষ নয়।

Advertisement

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

মাথায় উঠেছে সাবেক জনতা পরিবারের মিলন। আপাতত, কে হবেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী?—এই প্রশ্নেই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে পরিবারের দুই সদস্য জেডিইউ ও আরজেডি।
নীতীশ কুমার চাইছেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেই নির্বাচনে লড়তে নামুক সম্মিলিত জনতা দল। কিন্তু লালুপ্রসাদ চাইছেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। আর এখানেই শেষ নয়। আসন ভাগাভাগি নিয়েও দু’পক্ষের মধ্যে চাপানউতোর চরমে উঠেছে। আরজেডি নেতা রঘুবংশপ্রসাদ যাদব ইতিমধ্যেই ১৪৫টি আসনে তাঁরা লড়তে চান বলে দাবি জানিয়েছেন। তার জেরে নীতীশ বলেছেন, ‘‘১৪৫টি আসন কেন! ২৪৩টি আসনই তো ফাঁকা রয়েছে।’’
এই পরিস্থিতিতে দু’তরফের মধ্যে দূরত্ব কমাতে এগিয়ে এসেছেন নীতীশের দল জেডিইউয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি শরদ যাদব। গত কাল তিনি দু’বার লালুপ্রসাদের বাড়িতে এবং এক বার নীতীশ কুমারের বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেন। তারপরেও দু’পক্ষের মধ্যে বরফ গলেনি। মুখে শরদ অবশ্য বলছেন, ‘‘জোট হবে। অপেক্ষা করুন।’’

Advertisement

আজ দুপুরে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের সামনে লালুপ্রসাদ বলেন, ‘‘সময় চলে যাচ্ছে। আমি নীতীশকে ফোন করেছিলাম। তিনি বলেছেন, শরদ যাদবের সঙ্গে কথা বলতে। শরদ যাদব নিজে আমার বাড়িতে এসেছিলেন। কথা হয়েছে।’’ তবে তাঁদের দু’জনের মধ্যে কী কথা হয়েছে সে সম্পর্কে মুখ খোলেননি লালু। নীতীশ কুমার অবশ্য এ দিন মুখ্যমন্ত্রী-নিবাসে তাঁর সাপ্তাহিক জনতা-দরবারের পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সব বিষয়ে আমাকে বলতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। দলের অন্য নেতারা তো রয়েছেন। তাঁরাই কথা বলবেন। সব তরফেই চেষ্টা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে সবার কথা বলা উচিত নয়।’’

গত লোকসভা নির্বাচনে বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জোট ৩১টি আসনে জিতেছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দল ৪টি, জেডিইউ ২টি, কংগ্রেস ২টি এবং এনসিপি ১টি আসনে জেতে। কিন্তু প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের হিসেবে সম্মিলিত বিরোধীদের থেকে বিজেপি জোটের ভোট অনেকটাই কম। সেই কারণে বিজেপি-বিরোধী জোটের প্রয়োজনীয়তা নীতীশ-লালুদের কাছে অনেক বেশি। দায় রয়েছে কংগ্রেসেরও। সেই বিরোধী জোটে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি নিয়ে দুই প্রধান শরিকের টানাপড়েন তাই প্রবল। আজ আরজেডি নেতা রঘুবংশপ্রসাদ বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করে লড়াইয়ে নামা উচিত হবে না। গত কয়েক বছরে তিনি যা করেছেন তাতে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের কোনও লাভ হয়নি। অনেকেই তাঁর কাজে ক্ষুব্ধ। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বেই।’’ রাজ্য-রাজনীতির কুশীলবদের মতে, লালুপ্রসাদ না চাইলে রঘুবংশপ্রসাদ এমন কথা বলতে পারতেন না। এরই মধ্যে জিতনরামের সঙ্গেও কথা বলেছেন লালু। তাঁকে জনতা পরিবারে সামিল করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে লালুর যুক্তি, জিতনরাম তো বাইরের কেউ নন। বরং তিনি জনতা পরিবারেরই সদস্য। বিষয়টি যে তাঁর মনোমত নয় তা সরাসরি না হলেও, পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছেন নীতীশ। সংবাদিকদের এই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে নীতীশের জবাব, ‘‘আমার কাছে কারও আবেদন পত্র পড়ে নেই।’’

Advertisement

শনিবারের গাঁধী ময়দানের সভায় নীতীশের না যাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও লালু বিষয়টি নিয়ে এখনই প্রকাশ্য লড়াইয়ে যেতে রাজি নন। এমনকী অফিসারদের বদলিতে তাঁর কথা শোনা না হলেও তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। আজ লালু বলেন, ‘‘সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কী ভাবে নির্বাচনে আমরা লড়াই করব, সেই রণকৌশল তৈরি করতে অবিলম্বে আমাদের বসা উচিত। জোট নিয়ে আলোচনা করা উচিত। অনেকেই নানা বয়ান দিচ্ছেন। এতে পরিবেশ খারাপ হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। জোট হবে। একে অপরের উপরে বিশ্বাস রাখতে হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস না থাকলে সবারই লোকসান হবে। শত্রু পক্ষের লাভ হবে। দলের কোনও নেতার কাছে যেন ভুল বার্তা না যায়, তাও দেখতে হবে।’’

এরই মধ্যে দিল্লিতে দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে দেখা করেছেন বিহার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চৌধুরী। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নীতীশ কুমারের নেতৃত্বেই নির্বাচনে লড়তে চাইছি। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’ এর প্রেক্ষিতে নীতীশ বলেন, ‘‘বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর কংগ্রেস আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের েকটা সমঝোতা রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement