পঞ্চকুলায় গুরমিত রাম রহিম সিংহের ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষ পুলিশের। ছবি: পিটিআই।
বছরখানেক আগের ঘটনা। হিসার থেকে পঞ্চকুলা যাচ্ছিলেন জগদীপ সিংহ। রাস্তাতেই দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় চার জনকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। প্রথমে জরুরি পরিষেবার নম্বরে ফোন করে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাতে বলেন। উত্তর মেলে, ‘অ্যাম্বুল্যান্স কি উড়ে উড়ে যাবে?’ বাধ্য হয়ে নিজেই রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চার জনকে জিন্দের একটি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন জগদীপ সিংহ। ডেরা সচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহকে জেলে ঢুকিয়ে তিনিই আজ গোটা দেশে খবরে। পঞ্চকুলার সিবিআই আদালতের এই বিচারক ১৫ বছরের পুরনো ধর্ষণ মামলায় গুরমিত রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে গোটা দেশেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে তাঁকে ঘিরে। প্রশ্ন উঠছে, কে এই বিচারক, যিনি ধর্মগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করতেও ডরান না?
পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি পাওয়ার পরে প্রথমে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টেই ওকালতি করেছিলেন জগদীপ। ১২ বছর হাইকোর্টে সিভিল থেকে অপরাধ, সব মামলাই সামলেছেন। হরিয়ানা জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দেন ২০১২-তে। সোনীপতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার পর সিবিআই আদালতের বিচারক হিসেবে যোগ দেন। আইনজ্ঞদের যুক্তি, সিবিআই আদালতে কাউকে বিচারক হিসেবে নিয়োগের আগে হাইকোর্ট যে কোনও বিচারকের যোগ্যতা আতসকাচের তলায় ফেলে দেখে। তাই জগদীপের যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না। আর তাঁর পরিচিত আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, জগদীপ কম কথার লোক। দেখনদারি নেই। তবে বিচারক হিসেবে যথেষ্ট কড়া। মেরুদণ্ড সোজা রেখে চলা লোক।
গুরমিত রাম রহিমকে আজ শুধুই দোষী সাব্যস্ত করেছেন সিবিআই আদালতের বিচারক। সাজা ঘোষণা হবে সোমবার। কিন্তু আজকেই তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছে। আইনজীবী মহলের যুক্তি, এই রায় ঘিরে যে গোটা হরিয়ানা ও সংলগ্ন এলাকায় অশান্তি ছড়াবে, তা অজানা কিছু নয়। তাঁর উপরে রাজনৈতিক চাপও যে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তা সত্ত্বেও আইনের চোখে যেটা ঠিক বলে মনে হয়েছে, সেটাই করেছেন বিচারক জগদীপ সিংহ। যা থেকে এটা স্পষ্ট, আপস করার লোক নন তিনি।