সোনম রঘুবংশী। —ফাইল চিত্র।
একটি ট্রলিব্যাগ, আর তার ভিতরে থাকা একটি মঙ্গলসূত্র হার। এই দু’টি গয়না মেঘালয় হত্যাকাণ্ডে তদন্তের অভিমুখ বদলে দিয়েছে। বুধবার এমনটাই জানিয়েছে মেঘালয় পুলিশ।
ঘটনাক্রম উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, সদ্যবিবাহিত রাজা রঘুবংশী এবং সোনম রঘুবংশী গত ২২ মে মেঘালয়ের পূর্ব খাসি জেলার সোহরায় একটি হোমস্টেতে গিয়ে ওঠেন। কিন্তু সেখানে তাঁদের আগাম বুকিং না-থাকায় কোনও ঘর ফাঁকা ছিল না। তাই ওই হোমস্টেতে ট্রলি ব্যাগ রেখে নংরিয়াত গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন যে, ৩০০০ সিঁড়ি টপকে ওই গ্রামে পৌঁছোনোর জন্যই রাজা এবং সোনম সঙ্গে থাকা ব্যাগটি হোমস্টেতে রেখে গিয়েছিলেন।
২৩ মে সোহরায় ফিরে ওয়েইসডং জলপ্রপাত দেখতে যান রাজা এবং সোনম। ২ জুন ওই জলপ্রপাতের কাছ থেকেই রাজার দেহ উদ্ধার হয়। রহস্যের জট খুলতে সোহরার ওই হোমস্টেতে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকে মেলে রাজাদের রেখে যাওয়া ওই ট্রলিব্যাগটি। ট্রলিব্যাগ খুলে তদন্তকারীরা দেখেন, তার ভিতরে রয়েছে একটি মঙ্গলসূত্র এবং একটি আংটি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, বিবাহিত মহিলারা এই দু’টি জিনিসকে পবিত্র বলে মনে করেন। কোনও পরিস্থিতিতেই এগুলো ফেলে আসতে চান না। কিন্তু ট্রলিব্যাগ থেকে এই দু’টি জিনিস মিলতেই ‘নিখোঁজ’ সোনমের দিকে তদন্তের অভিমুখ ঘুরে যায়।
এই প্রসঙ্গে মেঘালয় পুলিশের ডিজি আই নোংরাং সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে বলেন, “আমরা সোহরার হোমস্টে থেকে সোনমের মঙ্গলসূত্র এবং আংটি উদ্ধার করি। একজন বিবাহিত মহিলা গয়না ফেলে যাচ্ছেন, এটাই তাঁকে সন্দেহ করার জোরালো কারণ বলে আমরা মনে করি। সেইমতো তদন্ত চলতে থাকে।”
বেশ কয়েক দিন ‘নিখোঁজ’ থাকার পর গত ৮ জুন মধ্যরাতে সোনম আত্মসমর্পণ করেন। ইনদওরে বা মেঘালয়ের কোথাও নয়, উত্তরপ্রদেশের গাজ়িপুরে। স্বামীকে খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে মেঘালয় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় আরও তিন জনকে। অভিযোগ, স্বামীকে খুনের জন্য সোনম ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিলেন। তাঁদের টাকাও দিয়ে দিয়েছিলেন। এর পরেই রাজ কুশওয়াহা নামের যুবকের সঙ্গে সোনমের প্রেমের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোনম এবং রাজ একে অপরকে বিয়ের আগে থেকেই চিনতেন।
সোনমকে বুধবার শিলঙের আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। পুলিশ ১০ দিনের হেফাজতের দাবি জানালেও তাঁকে আপাতত আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সোনম বা অন্য অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা যায়নি। নথি সংক্রান্ত কাজে তদন্তকারীরা ব্যস্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁদের পুরোদমে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পূর্ব খাসি পাহাড়ের সহকারী এসপি। খুনের ঘটনার সঙ্গে সোনমের জড়িত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেছেন।