Parshottam Rupala

Parshottam Rupala: এ বার কি বাঙালির মাছ খাওয়ায় কোপ? মোদীর মন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে শুরু জল্পনা

মন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরেই উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন। চালু কথায়, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। ফলে তাদের উদ্বেগই সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৭
Share:

পুরুষোত্তম রূপালা

এ বার কি মাছের পালা?

Advertisement

কেন্দ্রীয় মৎস্য ও পশুপালনমন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালার মাছ নিয়ে মন্তব্যের পরে এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে।

দিন কয়েক আগে গুজরাতে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে পুরুষোত্তম বলেন, ‘‘সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর বাপের বাড়ি সমুদ্র। তিনি সমুদ্রের কন্যা। আবার মাছও সমুদ্রের কন্যা। এক অর্থে, দেবী লক্ষ্মী এবং মাছ আসলে দুই বোন।’’ এর পরেই তিনি যোগ করেন, ‘‘আপনারা দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ চাইলে তাঁর বোনেরও আশীর্বাদ প্রার্থনা করবেন।’’ একই সঙ্গে মৎস্য অবতারের কথাও মনে করিয়ে দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকেদের।

Advertisement

আর মন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরেই উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন। চালু কথায়, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। ফলে তাদের উদ্বেগই সবচেয়ে বেশি। পিছিয়ে নেই কেরল, গোয়া, তামিলনাড়ু, ওড়িশা-সহ অন্য মৎস্যপ্রিয় রাজ্যগুলির বাসিন্দারাও। সকলেরই প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় এ বারে কি তা হলে মাছ খাওয়ার উপরে কোপ পড়তে চলেছে?

এমনিতেই মোদী জমানায় দেশে খাদ্য-পানীয় থেকে শুরু করে পোশাক, আচার-আচরণ-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা মতামত ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে একাধিক বার বিতর্ক বাড়িয়েছেন হিন্দুত্ববাদী নেতারা। সে সব অমান্য করলে কিছু ক্ষেত্রে শাস্তিও জুটেছে। গো-মাংস বহন বা বাড়িতে রাখার ‘অপরাধে’ পিটিয়ে খুন করার সংখ্যাও কম নয়। মাছের ক্ষেত্রেও তেমনটা হবে না তো, এই প্রশ্নই উঠছে নেটমাধ্যমে।

বাঙালিদের আশঙ্কার জায়গাটা আবার অন্য রকম। ভাতের পাতে মাছ না হলে চলে তার। তা নিয়ে খোঁটাও শুনতে হয় বিস্তর। বিশেষত ‘মছলিখোর বংগালি’ বলে বাঙালিদের প্রায়শই আক্রমণ করে উত্তর ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের একটা বড় অংশ। তার উপর বাঙালির পুজোপার্বনে মাছ খাওয়া নিয়ে তাদের চোখ রাঙানিও কম নয়। গত কয়েক বছর ধরে দুর্গা পুজোর সময় ‘নিরামিষ খাওয়ার উপকারিতা’ বা ‘মাছ খাওয়ার অপকারিতা’মূলক নানা লেখা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে চলেছে হিন্দুত্ববাদীরা। এ বারে খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাছকে দেবীর বোন বলে মন্তব্য করার পরে কি হবে, তা নিয়ে তাই নানা জল্পনা শুরু হয়েছে।

এ দেশের কোনও কোনও রাজ্যে মৎস্য বিলাসের জন্য বাঙালি বা আমিষাশীদের কোণঠাসা হওয়ার কথা মনে করাচ্ছেন খাদ্য ইতিহাস বিষয়ক গবেষক-লেখিকা উৎসা রায়ও। তাঁর কথায়, "ধর্মের বিকৃত ছায়ায় একটি আদ্যন্ত নিরামিষাশী ভারতবর্ষের ধারণা চাউর করার চেষ্টা চলছে, যা উদ্বেগের। এর জন্য ভারতের খাদ্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলতে এরা কসুর করে না।" যেমন ন্যাশনাল মিউজিয়মে হরপ্পার খাবারের প্রদর্শনীতেও আমিষকে ব্রাত্য করা হয়। পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি লক্ষ্মী ও মাছের এমন অদ্ভুত সম্পর্কে হাসছেন। তাঁর কথায়, "সমুদ্রের সব মাছকে মা লক্ষ্মীর বোন ধরলে হাঙরগোছের ভয়াল জীবদেরও লক্ষ্মীর সমপর্যায়ের ধরতে হয়!" বাণভট্টের কাদম্বরীর বহু চর্চিত শ্লোকে সমুদ্রবাসিনী লক্ষ্মী ও তাঁর সঙ্গীদের প্রসঙ্গেও কিন্তু মাছ নিয়ে কোনও কথা নেই," বলছেন তিনি।

তারই মধ্যে আশার আলো দেখেছেন কেউ কেউ। তাঁদের সরস বক্তব্য, ‘‘মন্ত্রী সমুদ্রের মাছকে লক্ষ্মীর বোন বলেছেন, পুকুর বা নদীর মাছ নিয়ে কিছু বলেননি। বাঙালি তুলনামূলক ভাবে পুকুর বা নদীর মাছ বেশি খায়। তারা বোধহয় কারও আত্মীয় নয়।’’ ফলে বিপদ এখনও ততটা নয়, আশা তাঁদের।

সেটাই বাঁচোয়া!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন