taliban

নতুন সরকারে কতটা গুরুত্ব পাবেন সিরাজউদ্দিন হক্কানি, নজর রাখছে উদ্বিগ্ন দিল্লি

তালিবান তাদের সরকার গঠনে সিরাজুদ্দিন হক্কানিকে কতটা জায়গা দেয়, তার উপরে ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২১ ০৭:২৪
Share:

সিরাজউদ্দিন হক্কানি। ফাইল চিত্র।

যুদ্ধ পর্ব শেষ। কাবুল দখলের পরে তালিবান নেতৃত্ব এ বার দোহায় রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সরকার গঠনের পথে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, তালিবান সংগঠনের দু’নম্বর ব্যক্তি মোল্লা আব্দুল গনি বরাদরই খুব সম্ভবত সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। তিনি আপাতত তালিবানের রাজনৈতিক শাখার সর্বেসর্বাও বটে।

Advertisement

তবে হক্কানি জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতা সিরাজুদ্দিন হক্কানিকে আফগানিস্তানের আগামী সরকারে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লি। কারণ সিরাজুদ্দিন পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ঘনিষ্ঠ। তার সঙ্গে যোগ রয়েছে আল কায়দারও।

তালিবান আন্দোলনের গোড়া থেকে রয়েছেন বরাদর। সংগঠনের মধ্যে তাঁর প্রবল প্রতাপ। অনুগামীও অনেক। গত সপ্তাহে দোহা থেকে কন্দহরে এসে তাঁকে তালিবানের পক্ষ থেকে প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করতেও দেখা গিয়েছে। তিনি মোল্লা ওমরের সঙ্গে তালিবান গোষ্ঠী তৈরি করেন। দু’জনে ছিলেন পরস্পরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ২০১০ সালে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বরাদরকে গ্রেফতার করে। কূটনীতিকদের একাংশের মতে, সেই গ্রেফতারি ছিল লোক দেখানো। আসলে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। অন্য অংশের মতে, বরাদর সে সময়ে শান্তি আলোচনায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজ়াইয়ের সুরে সুর মেলাচ্ছিলেন। হামিদ ছিলেন অনেকটাই পাক-বিরোধী। পাক সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সংঘাত লেগেই ছিল। আট বছর পাক নজরদারিতে থাকার পরে বরাদর ছাড়া পান। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে তালিবানের সঙ্গে নতুন করে কথা শুরু করেন। ভারতীয় শিবিরের দাবি, বরাদরের সঙ্গে পাক সামরিক বাহিনী এবং আইএসআই-এর সম্পর্ক কিছুটা ধোঁয়াশায় ঢাকা। তিনি সরাসরি আইএসআই-এর হাতে তামাক নাও খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বরাদর সরকারের শীর্ষ পদে বসলে পাকিস্তানের হক্কানি নেটওয়ার্ক বা লস্করের প্রভাব আফগানিস্তানের মাটিতে কমতেও পারে।

Advertisement

কিন্তু এমনটাও হতে পারে সরকারের মাথায় বসলেন বরাদর। আর তাঁর মাথায় বসলেন তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা, হায়বাতুল্লা আখুনজাদা। তিনি সরাসরি সরকারে না থাকলেও বাইরে থেকে প্রবল ক্ষমতা ভোগ করতে পারেন। সূত্রের মতে, দোহার আলোচনায় ইরানের ধাঁচে এক জন ‘শীর্ষ নেতা’ রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছে তালিবান। সে ক্ষেত্রে আখুনজাদা সেই ভূমিকা নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আফগানিস্তানে আইএসআই-এর প্রভাব বাড়বে বই কমবে না।

তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৯৬ থে্কে ২০০১ পর্যন্ত তালিবান সরকারের নেতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মহম্মদ ইয়াকুবের বয়স ৩১। এই বয়সেই তালিবানের সামরিক বিভাগের প্রধান তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই আসন্ন সরকারের কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ পদই তাঁকে দেওয়া হবে। ২০১৬ সালে যখন তালিবানের নতুন নেতা খোঁজা শুরু হয়, ইয়াকুব খুব একটা জোরের সঙ্গে নিজেকে সামনে আনেননি। কিন্তু এ বার তাঁকে সামনের সারিতে দেখা যাবে বলেই জানা গিয়েছে।

তবে ভারতের সবচেয়ে আগ্রহ সিরাজুদ্দিন হক্কানিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে আগামী সরকারে, তা নিয়ে। বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। আপাতত কিছুটা আড়ালে থাকা সিরাজুদ্দিন হক্কানি তার বাবা জালালুদ্দিনের পরে হক্কানি গোষ্ঠী হস্তগত করে। ২০০৭ থেকে সে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিষিদ্ধ জঙ্গি তালিকায় রয়েছে। তার মাথার দাম ৫০ লক্ষ ডলার পর্যন্ত হেঁকেছিল আমেরিকা। হক্কানি নেটওয়ার্ক একটি জঙ্গি সংগঠন কিন্তু তার অস্তিত্ব তালিবানের থেকে আলাদা। তারা অনেকটাই বেশি ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানের আইএসআই-এর সঙ্গে। পাকিস্তানের উত্তর ওজ়িরিস্তানে তাদের দুর্গ গড়ে উঠেছে। আল কায়দার সঙ্গে হক্কানিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলেই মনে করে সাউথ ব্লক।

ফলে শেষপর্যন্ত তালিবান তাদের সরকার গঠনে সিরাজুদ্দিন হক্কানিকে কতটা জায়গা দেয়, তার উপরে ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন