নতুন করে তৈরি হওয়া সেই দুর্গা মূর্তি।
গিনেস বুকে নাম তোলার আগেই ১৭ সেপ্টেম্বরের প্রবল ঝড়ে ভেঙে পড়েছিল ১১০ ফুট উঁচু বাঁশের দুর্গা মূর্তি। তা তৈরি করতে সময় লেগেছিল দু’মাস। গুয়াহাটির বিষ্ণুপুর সর্বজনীনের সেই মূর্তি ভেঙে পড়ায় এক রাতের জন্য ভেঙে পড়েছিলেন পুজোর উদ্যোক্তারাও। মাত্র ৯ দিন পরে পুজো। তাই ফের সব গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল দুঃসাধ্য, অসম্ভব। ঘটনার সময় প্রধান শিল্পী নূরউদ্দিন আহমেদ ছিলেন গোয়ালপাড়ায়। পরের দিন ফিরে এসেই তিনি অভয় দেন, ফের মাথা তুলবেন দেবী দুর্গা।
যেমন কথা, তেমন কাজ। ৭০ জন শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন রাত ২টো পর্যন্ত খেটে, নগাঁও-কাজিরাঙা থেকে আরও দু’হাজার বাঁশ নিয়ে এসে সেই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন নূর ও তাঁর দুই পুত্র রাজ-দীপ। মাত্র পাঁচ দিনে ফের মাথা তুলেছে ১০০ ফুট উচ্চতার সেই দুর্গা প্রতিমা।
২০১৫ সালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে ৮৮ ফুট উঁচু প্রতিমা গড়া হয়েছিল। সেটাই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু দুর্গা প্রতিমা। সেই নজির টপকাতেই এ বছর বিষ্ণুপুর ১১০ ফুটের দুর্গা গড়ে। মূল মণ্ডপ থাকছে তার তলায়। ভিতরের প্রতিমাও বাঁশেরই।
বিশালতাই বিষ্ণুপুরের বরাবরের চমক। আর গত সাত বছর ধরে নূরউদ্দিনে ভরসা রেখেই পুজো মাত করেছে তাঁরা। অসহিষ্ণুতার আবহে নূরউদ্দিনের সঙ্গে দুর্গার এই স্রষ্টা ও সৃষ্টির বন্ধন সম্প্রীতিরও এক অনন্য নিদর্শন। নূরের হাত ধরে ভেঙে পড়া মণ্ডপও যে মাত্র পাঁচ দিনেই তৈরি হয়ে যাবে তা কমিটির কর্তারাও ভাবতে পারেননি। বাঁশ সংগ্রহ করে ১৯ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করেন নূর ও তাঁর দলবল। গত কাল রাতে বিরাট দুর্গাপ্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৭তম বছরে ২৭ লক্ষ টাকা বাজেট ছিল পুজো কমিটির। ফের মণ্ডপ-মূর্তি গড়ার ধাক্কায় এক লাফে তা অনেকটাই বেড়ে গেল। কিন্তু তাতে কারও আক্ষেপ নেই।
আরও পড়ুন: দেবী দু্র্গাকে ‘যৌনকর্মী’ বলে বিতর্কের মুখে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
তবে পুজোর সময় অতবড় মূর্তি ভেঙে পড়লে বিপদ হতে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। তাই এবার আরও শক্ত করে মূর্তি তৈরির পাশাপাশি তা লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উচ্চতা ১১০ ফুট থেকে কমিয়ে ১০০ ফুট করা হয়েছে। মূর্তি সরাসরি মাটি থেকে দাঁড় করানো হয়েছে এ বার। তার ত্রিশূল ধরা হাতের উচ্চতা ও কোণও কমানো হয়েছে।
আহমেদ জানান, গিনেস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চলছে। তারা সরকারি স্বীকৃতিপত্র চেয়েছে। লিমকা বুকে রেকর্ড গড়া প্রায় নিশ্চিত। কমিটির মতে, শুধু উচ্চতাই নয়, যত কম সময়ের মধ্যে ভেঙে পড়া মূর্তি ফের প্রতিষ্ঠা করলেন নূর- তাও এক বিরল নজির।
ছবি: দীপ আহমেদ।