ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার পর বিহারে মহিলা ভোটারের সংখ্যা কমেছে। —ফাইল চিত্র।
বিহারে মহিলা এবং পুরুষ ভোটারের অনুপাত বেশ খানিকটা কমেছে। ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সমীক্ষার (এসআইআর) পরে নির্বাচন কমিশন যে তালিকা চূড়ান্ত করেছে, তাতে মহিলা ও পুরুষ ভোটারের অনুপাত ৮৯২:১০০০। অর্থাৎ, প্রতি ১০০০ জন পুরুষে নারীর সংখ্যা ৮৯২। বিহারে মহিলা ভোটারের অনুপাত গত ১৫ বছরে শুধুই বেড়েছে। এই প্রথম তা কমে গেল।
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী বিহারে এখন মোট ভোটারের সংখ্যা ৭.৪৩ কোটি। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৩.৯২ কোটি এবং মহিলা সাড়ে তিন কোটি। এ ছাড়া, ১৭২৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন বিহারে। ২০২০ সালে এই রাজ্যে মহিলা-পুরুষ ভোটার অনুপাত ছিল ৮৯৯:১০০০। এ বার প্রতি হাজার জন পুরুষে সাত জন মহিলা ভোটার কমেছে।
বিহারে মোট জেলার সংখ্যা ৩৮। তার মধ্যে ৩২টি জেলায় এসআইআর-এর পরে লিঙ্গভিত্তিক ভোটার অনুপাত প্রকাশ করা হয়েছে। ১৫টি জেলাতেই অনুপাত আগের বছরের চেয়ে কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মহিলা ভোটারের সংখ্যা কমেছিল বিহারে। তখন নারী-পুরুষ অনুপাত ৮৬৫:১০০০ থেকে কমে হয়েছিল ৮৫৯:১০০০। তার পর ২০১০ থেকে এই অনুপাত ক্রমে বাড়ছিল। হাজারের অনুপাতে ২০১৫ সালে বিহারে মহিলার সংখ্যা ছিল ৮৭৪, ২০২০ সালে ৮৯৯। এমনকি, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়েও বিহারে মহিলা ভোটারের অনুপাত ছিল ৯০৭।
২০০৫ থেকে বিহারের কুর্সিতে রয়েছেন নীতীশ কুমার। ক্ষমতায় আসার পরেই মহিলাদের উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নে জোর দিয়েছিলেন তিনি। একাধিক নারীকেন্দ্রিক প্রকল্পও চালু করেছিলেন। মনে করা হচ্ছিল, সেই কারণে বিহারে মহিলা ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আবার সেই ধারায় পরিবর্তন এল। দেখা গিয়েছে, এ বছর ভোটার তালিকায় নতুন করে যত নাম যোগ হয়েছে, তাতে মহিলার হার মাত্র ১৭.৯৩ শতাংশ। ২০২০ সালে নতুন মহিলা ভোটারের এই হার ছিল ৫৩.৫১ শতাংশ। গত অগস্টে খসড়া তালিকাতেও প্রচুর মহিলা ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়।
২০১১ সালের জনগণনায় বিহারে সার্বিক ভাবে নারী-পুরুষের যে অনুপাত, এসআইআর-এর পরে ভোটার তালিকায় নারী-পুরুষ অনুপাত তার চেয়েও কমে গিয়েছে। জনগণনায় অনুপাত ছিল ৯১৮:১০০০। শতাংশের বিচারে বিহারে এখন মহিলা ভোটার রয়েছেন ৪৭.০৫ শতাংশ।
জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, মহিলা-পুরুষ ভোটারের ব্যবধান সবচেয়ে কম ভাগলপুরে (প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৩৯ মহিলা)। ব্যবধান সবচেয়ে বেশি রয়েছে চম্পারন জেলায় (প্রতি ১০০০ পুরুষে ৮৭২ মহিলা)। এ ছাড়া, গোপালগঞ্জ, গয়া, সিওয়ান, আরওয়াল, জেনানাবাদের মতো জেলায় মহিলা-পুরুষের ব্যবধান এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।
অনুপাত যা-ই থাক, ভোটবাক্সে এর খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছে বিহারের শাসকদল জেডিইউ। তাদের মুখপাত্র অঞ্জুম আরা বলেন, ‘‘এ রাজ্যে সরকার গঠনে মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট সচেতন। তাঁরা জানেন, কোন দল তাঁদের জন্য কাজ করে।’’ অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য ঘরে ঘরে অতিরিক্ত পুরুষ নির্ভরশীলতা মহিলার অনুপাত হ্রাসের নেপথ্যে অন্যতম কারণ। আগামী ৬ এবং ১১ নভেম্বর দুই দফায় বিহারে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ নভেম্বর ভোটগণনার দিন ধার্য হয়েছে।