পয়লায় বাঙালিখানা

হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি পরিবারে নববর্ষের দিনে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়ে থাকে। হরেক পদের খাওয়াদাওয়া ছাড়া নববর্ষের উৎসব পূর্ণতা পায় না। বর্তমানে কর্মব্যস্ততার সময় ও লোকবলের অভাবে বাড়ির পরিবর্তে হোটেল-রেস্তোরাঁয় গিয়েই নববর্ষের বিশেষ ভূরিভোজ সেরে থাকেন অধিকাংশ বাঙালি পরিবার। লিখছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত বাঙালি পরিবারে নববর্ষের দিনে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়ে থাকে। হরেক পদের খাওয়াদাওয়া ছাড়া নববর্ষের উৎসব পূর্ণতা পায় না। বর্তমানে কর্মব্যস্ততার সময় ও লোকবলের অভাবে বাড়ির পরিবর্তে হোটেল-রেস্তোরাঁয় গিয়েই নববর্ষের বিশেষ ভূরিভোজ সেরে থাকেন অধিকাংশ বাঙালি পরিবার। লিখছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০৩
Share:

মুম্বইয়ের প্রবাসী বাঙালিরা যাতে নববর্ষের দিনে রকমারি বাঙালি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে ভারত বিখ্যাত বাঙালি খাবারের রেস্তোরাঁ ভজহরি মান্নার অন্যতম কর্ণধার রাজীব নিয়োগী তাদের মুম্বইয়ের শাখাগুলিতে বিশেষ ভূরিভোজের আয়োজন করেছেন। এই উপলক্ষে এখন সাজ সাজ রব। গঙ্গা পদ্মার ইলিশ সঙ্গে টাটকা চিংড়ি, চিতল, পাবদা, পার্শ্বে, কৈ, তোপসে, ট্যাংরা, ভেটকি প্রভৃতি মাছ বাক্সবন্দি হয়ে কলকাতা থেকে বিমানে মুম্বই পাড়ি দিচ্ছে। কলকাতা থেকে বাঙালি রান্নার পারদর্শী রাঁধুনি ও মিষ্টির কারিগররাও উড়ে এসেছেন মুম্বই। খাবারের সঙ্গে রকমারি বাঙালি মিষ্টিও তৈরি হবে নববর্ষ উপলক্ষে।

Advertisement

প্রথম জীবনে চাকরি সূত্রে বেশ কয়েক বছর মুম্বই প্রবাসী ছিলেন রাজীব, প্রেম-পরিণয় সবই এই শহরে, তাই মুম্বইয়ের প্রতি রাজীবের একটা আলাদা আবেগ রয়েছে। চাকরি জীবনে এই ভেতো বাঙালি মুম্বইয়ে মাছ-ভাতের অভাব অনুভব করায় মনে মনে ঠিক করেছিলেন একদিন এই শহরে তিনি বাঙালির মাছ ভাতের হোটেল খুলবেন। তার সেই আশা বেশ কয়েক বছর পূর্ণ হয়েছে। রাজীব জানালেন, এ বছর ১ বৈশাখের দিনে মুম্বইয়ের ওশিয়ারা, চেম্বুর ও পাওয়াইতে ভজহরি মান্না রেস্তোরাঁর প্রতিটি শাখায় মধ্যাহ্ন ও নৈশভোজের সময় আমিষ ও নিরামিষ বিশেষ বাঙালি বর্ষবরণ থালি পরিবেশিত হবে। আমিষ থালিতে পরিবেশিত হবে আমপোড়ার সরবৎ, সরু চালের ভাত, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, ঝুরি ঝুরি আলুভাজা, চিংড়ি আলুফুলকপি, জাম্বো ইলিশ বরিশালী, বাসন্তি পোলাও, কষা মাংস, চাটনি, দু’রকমের মিষ্টি ও মিষ্টিপান।

নিরামিশ থালিতে থাকছে ভাত, শুকতো, কড়াইশুঁটি দিয়ে ভাজা মুগ ডাল, ঝুরি আলুভাজা, আলু ফুলকপির ডালনা, পোস্তর বড়া, বাসন্তী পোলাও, এচোড়ের কালিয়া, চাটনি, দু’ রকমের মিষ্টি ও পান।

Advertisement

আমিষ থালির দাম—৭৫০ টাকা, কর অতিরিক্ত এবং নিরামিষ থালির দাম ৫৫০ টাকা কর অতিরিক্ত। থালি ছাড়াও আলা কাট মেনুতে থাকছে মোচার পাতুরি, ছানার কোপ্তা, ধোকার ডালনা, লুচি, কড়াইশুঁটির কচুরি, ছোলার ডাল, আলুর দম, মোচা-চিড়িং, চিংড়িমাছের মালাইকারি, ভেটকি পাতুরি, তেলকৈ, ট্যাংরার ঝাল, পাবদার রসা, পার্শ্বে সরষে, চিতল পেটির কালিয়া, মাটন ও চিকেন ডাকবাংলো, ইলিশ বিরিয়ানি, সরষে ইলিশ, ইলিশ মাছভাজা, তেল, কাঁচালঙ্কা, কচি পাঁঠার ঝোল প্রভৃতি। যারা ইচ্ছে থাকলেও সময়ের অভাবে রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেতে পারবেন না, তারা চাইলে ফ্রি হোম ডেলিভারি সার্ভিসে অফিসে বা বাড়িতে খাবার অর্ডার দিয়ে আনিয়ে নিতে পারেন। ওশিওয়াড়া—৪০১৪২৯৭৩, চেম্বুর—২৮৫৭৪৪৭৭ নাম্বারে ফোন করে খাবারের অর্ডার দেওয়া যাবে। নববর্ষের দিনে অফিসে কাজের ফাঁকে মধ্যাহ্নভোজে বা রাত্রে বাড়ি ফিরে বাড়ির লোক ও বন্ধুদের সঙ্গে বর্ষবরণ থালি খেতে নস্টালজিক হতে পারেন।

যারা বাড়িতে রান্না করে নববর্ষ পালন করতে চান তাদের জন্য ভজহরি মান্নার একটি বিশেষ পদের রেসিপি জানানো হল।

গোটা মশলার মুরগি

উপকরণ: ড্রেসড চিকেন (হাড়-সহ) ১ কেজি। মোট ৮-১০ খণ্ড করে চিকেন কেটে নিন। জলে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। একটি পাত্রে ১ চামচ আদাবাটা, ১ চা-চামচ রসুনবাটা, ১ চা-চামচ ধনের গুঁড়ো, ১ চা-চামচ শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো, আন্দাজ মতো নুন, ভাতের হাতার ১ হাতা ঘন টক দই, ভাতের হাতার ১ হাতা সরষের তেল, আন্দাজ মতন নুন, ৪টি তেজপাতা, ১০টা লবঙ্গ, দারচিনির ছোট স্টিক ৬টা, ৮টা ছোট এলাচ নিয়ে হাতের সাহায্যে ভাল করে মিলিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এ বার এই মিশ্রণের মধ্যে মুরগির খণ্ডগুলো দিয়ে হাতের সাহায্যে মিশ্রণটা ভাল ভাবে মাখিয়ে নিন। ঘণ্টাখানেক ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। ঘণ্টাখানেক কড়া আঁচে বসিয়ে মিশ্রণ মাখানো চিকেনের খণ্ডগুলো দিয়ে নিভু আঁচে নেড়ে কষে নিন। আন্দাজ মতো জল দিয়ে চিকেন অর্ধেক সিদ্ধ করুন। হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে অন্য পাত্রে ঢেলে রাখুন।

অন্য উপকরণ: সরষের তেল ৫০ গ্রাম, ৩টে তেজপাতা, ১২টা ছোট এলাচ, ৬টা দারচিনির স্টিক, আদা, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ফ্রেশ টমেটো পেস্ট এক কাপ, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা-চামচ, ধনেগুঁড়ো হাফ চা-চামচ, সিদ্ধ করা পেঁয়াজ বাটা ৩০০ গ্রাম, আন্দাজ মতো নুন, কাজুবাটা ৬ টেবিল চামচ, ধনেপাতাকুচি ২ চা-চামচ।

প্রণালী: কড়া আঁচে বসিয়ে সরষের তেল গরম করে তেজপাতা, ছোট এলাচ, দারচিনি ফোড়ন দিয়ে আদা রসুন বাটা দিন। একটু ভেজে নিন। এ বার ফ্রেশ টমেটো পিউরি দিয়ে নেড়ে মেশান। এ বার শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো, ধনের গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে মেশান। মিশে গেলে সিদ্ধ করা পেঁয়াজবাটা দিয়ে নেড়ে নিভু আঁচে কষুন। হালকা বাদামি হলে ও তেল ছাড়লে আন্দাজ মতো জল দিয়ে নেড়ে মেশান। কিছুক্ষণ রান্না করুন। তেল ছাড়লে ওর মধ্যে আগের অর্ধেক সিদ্ধ করা চিকেনের খণ্ডগুলো ঢেলে দিন। অর্ধেক ভাজা ৬টা বড় আলুর খণ্ড দিন। নিভু আঁচে ঢাকনা বন্ধ করে মিনিট দশেক রান্না করুন। হয়ে গেলে ঢাকনা খুলে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে নেড়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। ভাত, পোলাও, রুটি বা পরোটা সহযোগে পরিবেশন করুন।

—ছবি: লেখক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন