ইয়েড্ডির ডায়েরিতে উঠল ঝড়, অমিত বললেন জালিয়াতিতে নেমেছে কংগ্রেস

কংগ্রেস সরাসরি আঙুল তুলেছে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও। কারণ, ‘বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে’ আছেন তিনিও। কংগ্রেসের বক্তব্য, ২০১৭ থেকেই ডায়েরির এই পাতা আয়কর দফতরের কাছে আছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০২:৫১
Share:

অমিত শাহ ও ইয়েদুরাপ্পা। ফাইল চিত্র।

কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা তথা ইয়েড্ডির রহস্যময় এক ডায়েরির কয়েকটি পাতাকে অস্ত্র করে আজ ১৮০০ কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। তাদের দাবি, দশ বছর আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের ও অন্যদের দেওয়া হয়েছে ওই টাকা। কংগ্রেসের দাবি, ‘‘ডায়েরির ওই পাতায় বলা রয়েছে, অরুণ জেটলি পেয়েছেন ১৫০ কোটি টাকা। নিতিন গডকড়ী ১৫০ কোটি টাকা। রাজনাথ সিংহ ১০০ কোটি টাকা। লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলীমনোহর জোশী ৫০ কোটি টাকা করে। বিচারকদের জন্য ২৫০ কোটি টাকা। আইনজীবীদের জন্য ৫০ কোটি টাকা। গোটা বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিকে ১০০০ কোটি টাকা। সঙ্গে গডকড়ীর ছেলের বিয়ের খরচ ১০ কোটি টাকা।’’

Advertisement

কংগ্রেস সরাসরি আঙুল তুলেছে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও। কারণ, ‘বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে’ আছেন তিনিও। কংগ্রেসের বক্তব্য, ২০১৭ থেকেই ডায়েরির এই পাতা আয়কর দফতরের কাছে আছে। সব পাতায় ইয়েদুরাপ্পার সই আছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। ফলে ‘চৌকিদারই চোর’। তদন্তের জন্য লোকপালে পাঠানো হোক এই ডায়েরি। টুইটার-ফেসবুকে রাহুল লেখেন, ‘‘বিজেপির সব চৌকিদারই চোর। নমো, অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ, __, __, __।’’

কংগ্রেস কাল জানিয়েছিল, আজ সকাল সওয়া দশটায় সাংবাদিক বৈঠক করবেন রাহুল। পরে তা পিছোনো হয় একটায়। ফের দু’টোয়। বেলা যত গড়িয়েছে, কংগ্রেসও বলতে শুরু করে, ‘বড় অভিযোগ’ আসছে। বিজেপির উৎকণ্ঠা বাড়ে। দলের দফতরে টিভির সামনে বসে নেতা-মন্ত্রীরা। কী বলেন রাহুল? নতুন কী ফাঁস করেন? দু’টোর পরে রাহুল নয়, এলেন রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। ইয়েদুরাপ্পার ডায়েরির কয়েকটি পাতার প্রতিলিপি নিয়ে।

Advertisement

কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০০৮ থেকে ২০১১, ইয়েদুরাপ্পা কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালে ২৬৯০ কোটি টাকা তোলা হয়েছিল। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে তা থেকে ১৮০০ কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের। ২০১১-তে খনি দুর্নীতির অভিযোগে পদ খোয়ান ইয়েড্ডি। মোদী জমানায় ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের প্রধান ছিলেন সুশীল চন্দ্র। তাঁর নেতৃত্বে আয়কর হানায় ওই ডায়েরির পাতা পাওয়া যায়। আয়কর দফতর ইডিকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছে আবেদন করে। কিন্তু দু’বছর ধরে ফাইল নিয়ে বসে থাকেন জেটলি। আর সুশীল চন্দ্র এখন নির্বাচন কমিশনার।

দুর্নীতির নতুন অভিযোগ সামনে আসতেই ফের ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা সরকারিতন্ত্র। আয়কর দফতরকে দিয়ে তড়িঘড়ি বিবৃতি দেওয়ানো হয়। বিজেপি দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করতে ছুটে যান মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। আয়করের বিবৃতি পড়ে শোনান তিনি। বলেন, ‘‘পর্বতের মূষিক প্রসবও হল না।’’ অমিত শাহ টুইট করেন, ‘‘সব ভুয়ো প্রসঙ্গ ধসে পড়েছে। এখন মরিয়া হয়ে জালিয়াতিতে নেমেছে।... জালিয়াতিও ওদের বাঁচাতে পারবে না। কয়েকটা খোলা পাতা দিয়েছেন কংগ্রেসের মন্ত্রী, এটা রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বদানের দক্ষতার মতোই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য।’’ বিজেপি সভাপতি কেন সুরজেওয়ালাকে ‘মন্ত্রী’ লিখেছেন, তা স্পষ্ট নয়। কর্নাটকে ইয়েদুরাপ্পাকে দিয়ে বলানো হয়, ‘‘সব অভিযোগ ভুয়ো। আমার স্বাক্ষরই নেই ওতে। মানহানি মামলা করব।’’

আয়কর দফতরের বিবৃতি মোতাবেক রবিশঙ্কর যা বলেছেন, তার সারমর্ম হল, ২০১৭ সালে কর্নাটকের কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমারের বিরুদ্ধে আয়কর হানা হয়। তখন তিনি একটি ডায়েরির খোলা পাতার প্রতিলিপি দেন। দাবি করেন, এর হাতের লেখা ইয়েদুরাপ্পার। জেরায় ডায়েরির আসল পাতা দিতে পারেননি শিবকুমার। আসল পাতা না থাকায় হাতের লেখা যাচাই করা যায়নি।

আরও পড়ুন: প্রথম দফার তালিকাতে অসন্তুষ্ট কর্মীরা, ক্ষোভের মুখে জেরবার রাজ্য বিজেপি

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কংগ্রেসের বক্তব্য, সরকারিতন্ত্রকে ব্যবহার করেও সত্য লুকোতে পারবেন না মোদী। যে আয়কর দফতরকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ানো হল, তাতেও বলা হয়েছে, সরকারের কাছে ডায়েরির পাতা রয়েছে। ইয়েদুরাপ্পাকে এখনও ক্লিনচিট দেয়নি আয়কর বিভাগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন