স্বভূমিকায়: ডোমকলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাধ’— অস্ত্র নিয়ে মিছিলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার বীরভূমে প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে মিছিল করায় গেরুয়া বাহিনীর উপর লাঠি চার্জও করেছে তাঁর পুলিশ। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে খোলাখুলিই অসন্তোষ জানাচ্ছিল বিজেপি ও সঙ্ঘ। এ বার তাদেরই এক সৈনিক মমতার মাথা কেটে আনার ফতোয়া জারি করলেন। যার জেরে বুধবার সমালোচনায় উত্তাল হল রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি।
মঙ্গলবার সিউড়িতে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনা দেখে ওই ফতোয়া জারি করেছেন আলিগড়ের বিজেপি যুব মোর্চার নেতা যোগেশ ভার্সনে। তিনি বলেন, ‘‘সিউড়িতে যা ঘটেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। কেউ মমতার মাথা কেটে আনতে পারলে ১১ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেব।’’ যোগেশের ফতোয়া জানাজানি হতেই এ দিন সংসদের দুই কক্ষে তোলপাড় ফেলে দেয় সব বিরোধী দল। লোকসভায় সৌগত রায়, মল্লিকার্জুন খড়্গে, পি করুণাকরন এবং রাজ্যসভায় সুখেন্দুশেখর রায়, মায়াবতী, জয়া বচ্চনরা সমস্বরে দাবি করেন— বিজেপির ওই নেতাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, ‘‘বিজেপি এ ধরনের মন্তব্য সমর্থন করে না।’’ রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতিমন্ত্রী মখতার আব্বাস নকভিও জানান, রাজ্য ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতেই পারে।
যদিও নকভির এই বার্তার অপেক্ষায় থাকেনি বাংলার শাসক দল। যোগেশের বিরুদ্ধে কালীঘাট-সহ রাজ্যের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করতে নেমে পড়েন তৃণমূল কর্মীরা। সেই সঙ্গে সিআইডি-র ডিআইজি রাজেশ কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে ওই নেতাকে আলিগড় থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় এনে জেরা করা হবে।’’
এ দেশের রাজনীতিতে এ হেন ফতোয়ার সংস্কৃতি অভিনব নয়। সস্তায় প্রচার পেতে অনেক কট্টরপন্থী নেতাই এই পথে হাঁটেন। বাংলায় যেমন তৃণমূল নেতাদের পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা দিলীপ ঘোষদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই ফতোয়া দেন টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নুর-উর রহমান বরকতি। এ দিনও তাঁর পাল্টা ফতোয়া, যে ভার্সনের মাথা কেটে আনতে পারবে, তাকে তিনি ২২ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবেন!
আরও পড়ুন: দর কষতেই সাজা, স্পষ্ট দিল্লির কাছে
যোগেশের ফতোয়াকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার সুযোগ নিতে দেরি করেনি তৃণমূল। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুখেন্দুবাবুর মতো নেতারা বলেন, ‘‘এতে শাসক দলের মনোভাবটাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গোটা দেশে সন্ত্রাস ও হিংসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে বিজেপি।’’ আর এ দিন ডোমকলের এক সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এদের গুরুত্ব দিয়ে লাভ নেই। বরং ভগবানকে বলব, ওদের ক্ষমা করে দিন। ওরা জানে না কী বলছে!’’ কিন্তু তিনি এ-ও জানিয়ে দেন, ‘‘আমাকে চমকে, ধমকে লাভ হবে না। আমাকে চমকালে আমি গর্জাব!’’ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করে তাঁর উক্তি, ‘‘কিছু স্থানীয় নেতা তলোয়ার নিয়ে খেলার কথা বলছেন। কিন্তু এখানে তলোয়ার নিয়ে খেলা হয় না, সিঁদুর নিয়ে খেলা হয়।’’
গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়লেও তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি। রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় দাবি তোলেন, ‘‘তৃণমূলের ১৭ জন গুন্ডা আমাকে মেরেছিল। তার সমালোচনাও সংসদে করতে হবে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বরকতি সাহেব যখন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন, তখন তৃণমূল কেন চুপ ছিল। আমরা সে দিনের ফতোয়ার যেমন নিন্দা করেছি, তেমনই যোগেশের ফতোয়ারও নিন্দা করছি।’’ ভার্সনেকে গ্রেফতার করলে তারা বরকতিকেও গ্রেফতারের দাবি তুলবে বলে জানিয়েছে বিজেপি।