‘বিধায়ক কেনার টাকা আছে, শিক্ষার জন্য নেই’

কারও হাঁটুর নীচ থেকে পা আর নেই। কিন্তু হাতে উঁচিয়ে ধরা প্রতিবাদের পতাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৫
Share:

বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে সংসদ ভবন পর্যন্ত পদযাত্রায় জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও। শনিবার নয়াদিল্লিতে। এপি

‘জীবনে জেএনইউয়ের ত্রিসীমানায় পা রাখেননি শুভ্রজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু আট মাস আগে পুণেয় স্রেফ এক রাজনৈতিক নেতার সমালোচনার ‘অপরাধে’ গাড়ি যন্ত্রাংশ কারখানায় চাকরি খোয়ানোর রাগে শনিবার মিছিলে হাঁটলেন এখন গুরুগ্রাম নিবাসী এই ইঞ্জিনিয়ার।

Advertisement

কারও হাঁটুর নীচ থেকে পা আর নেই। কিন্তু হাতে উঁচিয়ে ধরা প্রতিবাদের পতাকা। কেউ আধঘুমন্ত ছোট মেয়েকে কাঁধে চাপিয়ে সামিল হয়েছেন মিছিলে। চলার মধ্যে রাস্তায় আচমকা বসে পড়ে চকের আঁচড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার স্লোগান লিখছেন কেউ। কেউ আবার গলার শির ফুলিয়ে দিয়ে চলা স্লোগানের তালে তালে ডফলি বাজিয়ে চলেছেন।

বর্ধিত ফি প্রত্যাহার-সহ এক গুচ্ছ দাবিতে এ দিন মান্ডি হাউস থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করেছিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠন জেএনইউএসইউ। আগের দিনের মতো পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়নি। কিন্তু জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ থেকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কানহাইয়া কুমার, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি থেকে ভীম আর্মির চন্দ্রশেখর আজাদ— সকলের অভিযোগ আকাশছোঁয়া মূর্তি তৈরির জন্য কিংবা অযোধ্যায় প্রদীপ জ্বালাতে সরকারের ঘরে বহু কোটি টাকা আছে। কিন্তু সস্তায় উচ্চশিক্ষার বন্দোবস্ত করার সময়ে মোদী সরকারের ভাঁড়ার বাড়ন্ত। কানহাইয়ার বক্তব্য, ‘‘জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে ৪০ শতাংশের পারিবারিক আয় দেড় লক্ষ টাকার নীচে। তা হলে কী ভাবে ফি বাড়িয়ে বছরে ৬০-৭০ হাজার টাকা করার কথা বলা হচ্ছে?’’

Advertisement

ছাত্র সংগঠন এআইএসএ-র প্রেসিডেন্ট এন সাই বালাজি, আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা-দের মতে, জেএনইউ মোদী সরকারের একমাত্র লক্ষ্য নয়, প্রথম নিশানা মাত্র। দেশে যে প্রতিষ্ঠানই প্রশাসনকে প্রশ্ন করার ‘স্পর্ধা’ দেখাবে, তাকেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে বলে তাঁদের অভিযোগ। এসএফআই, কেওয়াইএস, এআইএসএফ, এনএসইউআইয়ের মতো ছাত্র সংগঠন ছাড়াও মিছিলে সামিল হয়েছিল বাম কর্মী সংগঠন সিটু। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠনের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ছিলেন বহু আম-নাগরিকও। সংসদ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পুলিশের ব্যারিকেড আটকে দেওয়া পর্যন্ত মিছিলে কখনও শিক্ষার অধিকারের পক্ষে স্লোগান উঠল, তো কখনও দাবি উঠল জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা, ফি বৃদ্ধি ইত্যাদি থেকে ‘আজাদির’। প্রশ্ন উঠল, যে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের বিল ২৫০ কোটি টাকা সে দেশে পড়ুয়াদের সস্তায় হস্টেলে থাকতে দিতে কেন্দ্রের এত আপত্তি কেন? মহারাষ্ট্রে কুর্সি-কাণ্ডে অমিত শাহের নাম না করে কানহাইয়ার কটাক্ষ, ‘‘মোটা ভাইয়ের কাছে বিধায়ক কেনার টাকা আছে। কিন্তু শিক্ষায় ঢালার অর্থ নেই!’’

পড়ুয়াদের রাজনীতি করা নিয়ে যে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে, তা ছাত্র নেতারা জানেন। জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ যে কেন্দ্রের হাতিয়ার, তা-ও জানেন তাঁরা। হয়তো সেই কারণেই এ দিনের মিছিলের গর্জন বার বার দাবি করেছে, এই লড়াই শুধু জেএনইউ নয়, এমস, আইআইটি-সহ দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। লড়াই সকলের জন্য সস্তায় শিক্ষার অধিকার আদায়ের। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার রাস্তা খোলা রাখারও।

জেএনইউ কর্তৃপক্ষ দাবি না-মানলে ২৭ নভেম্বর সারা দেশে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হবে বলে ঐশীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন